
রবিউল হাসান, নোয়াখালী:
জমির বিভিন্ন প্রকার ফাইল এই অফিসে পড়ে থাকে মাসের পর মাস।প্রতি ফাইলে দিতে হয় নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ। তহসিলদারের নিয়োগকৃত দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে জমির মালিকরা। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌর তহসিলদার মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, একসনা বন্দবস্তের লীজমানি পরিশোধের জন্য গত ২৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আবেদন করেন শিমুলিয়া গ্রামের মৃত হাজি দুধ মিয়ার ছেলে ইমাম হোসেন। সোনাইমুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাতের স্বাক্ষর করে পৌর তহসিলদার প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এখনো জমা হয়নি ৯৭/২০১৫-১৬ নথীটির প্রতিবেদন।
অপর দিকে, চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম ও মো. হাবিবুল হাসান গত ০৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ১৪৯১/২০১৭-১৮ নং নথীর মূলে সৃজিত ৭০ নং জমা খারিজ খতিয়ান ও ৩৯৮/২৫-২৬ নং নথির মূলে সৃজিত ২৫-১০৮ নং খতিয়ানের বিরুদ্ধে আপত্তি করে আবেদন করেন। সেই নথীতেও সোনাইমুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাতের স্বাক্ষর করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তহসিলদারের দাবীকৃত ঘুষ না দেয়ায় দীর্ঘ এক মাসেও প্রতিবেদন জমা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে,সোনাইমুড়ী পৌর এলাকায় নামজারি খতিয়ান করতে জমির মালিকগণ অনলাইনে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পৌর তসিলদারকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলেই শুরু হয় ঘুষের লেনদেন। তহসিলদার মাইন উদ্দিনের দাবিকৃত টাকা না দিলেই শুরু হয় জমির মালিকদের হয়রানির। আর জমির মালিকরা সরাসরি আসলে তিনি হয়রানি করতে থাকেন। তার নিয়োকৃত দালালদের মাধ্যমে এলেই কাজ হয় নিমেষে। সোনাইমুড়ী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় দলিল লেখকরা তহসিলদারের নিয়োগ কৃত দালাল। তাদের মাধ্যমেই তিনি ঘুষের টাকা লেনদেন করে থাকেন। প্রত্যেক নামজারি নথীতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা গুনতে হয় ঘুষ। ঘুষ না দিলে প্রতিবেদন জমা হয়না কোনোক্রমেই।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর ভূমি অফিসে দেখা যায় তহশিলদার অফিসে নেই। সামনের ৩ টি চেয়ারে বসে আছে দলিল লেখকরা। সেবা নিতে আসা দুইজন বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে হাতে জমির কাগজপত্রের ব্যাগ নিয়ে। একজন মহিলা ওই অফিসের বাহিরে ঘুরাঘুরি করছে। তার হাতেও জমির কাগজপত্রের ফাইল রয়েছে। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় সেবা নিতে আশা ওই মহিলার। তিনি একসনা বন্দবস্তের লীজমানি পরিশোধের জন্য প্রায় তিন মাস পূর্বে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেন। তিনি প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পৌর তহসিলে পাঠিয়েছেন। কিন্তু, তার সাথে এখনো রিপোর্ট দেননি। বেলা প্রায় ১১ টায় তিনি তহসিলদারের কাছে এসেছেন। কিন্তু, তহসিলদারকে এখনো অফিসে পাননি। তাই তিনি অপেক্ষা করছেন।
(৫ নভেম্বর)দুপুর ১ টার দিকে পৌর ভূমি অফিসের সামনে বেঞ্চে সন্তান নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাসলিমা খানম নামে এক মহিলাকে। তার বাড়ি উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামে। তিনি দুই দাগে ১৫ শতক নাল জমি নামজারি করতে এই অফিসের একজন দালালের শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি অনলাইনে আবেদন করেছেন। নামজারি খতিয়ান হওয়ার পর টাকা নেবেন। তিনি এখন এসেছেন কাজের অগ্রগতি জানতে। তবে তহসিলদারকে না পেয়ে অপেক্ষা করছেন।
সেবা গ্রহিতা ইমাম হোসেন বলেন, তিনি ২ মাস আগে একসনা বন্দবস্তের লীজমানি পরিশোধের জন্য একটি আবেদন করেন। সেখানে সোনাইমুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাতের স্বাক্ষর করে দিলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন নি পৌর অফিসের তহসিলদার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় দলিল লেখক, লিটন, রহিমসহ অনেকেই এই অফিসে দালালি করে থাকে। প্রায় সময় দেখা যায় এ অফিসের বাইরে ঘুষের টাকা নিয়ে জমির মালিক ও দালালদের মধ্যে হট্টগোল করতে। প্রতিনিয়ত দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে জমির মালিকরা। তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাত এখানে যোগদান করেই ঘুষের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি দেন। কিন্তু, ঘুষ লেনদেন থেমে নেই। এতে জমির মালিকরা চরমভাবে হয়রানি হচ্ছে।
সোনাইমুড়ী পৌর তহসিলদার মাইন উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, তিনি অফিসিয়াল কাজে ঢাকার সুপ্রিম কোর্টে রয়েছেন। তার অফিসে ২-৩ মাস ধরে ফাইল পড়ে রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে কথা বলা অবস্থায় মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাত বলেন, সেবা গ্রহিতারা আবেদন করলে আমরা কাউকে অযথা হয়রানি করিনা। আমি বিষয়টা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।