1. info@www.dainikdeshbarta.com : bissho sangbad Online : bissho sangbad Online
  2. info@www.dainikdeshbarta.com : Dainik Desh Barta :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কর্ণফুলী থানা পুলিশ কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের উপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা চেয়ারম্যান – সচিবের দ্বন্দ্বে বোয়ালখালীতে ভোগান্তিতে জনসাধারণ বোয়ালখালীতে সরকারি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী সিআইপি বোয়ালখালীতে শরীফ ওসমান বিন হাদির  গায়েবানা জানাজা বোয়ালখালীতে শহীদ জিয়া স্মৃতি উন্মুক্ত অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন বোয়ালখালীতে ধানের শীষের সমর্থনে সনাতনী সম্প্রদায়ের মতবিনিময় সভা চন্দনাইশে হাজী আবদুল গফুর-আনজুমান আরা বেগম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অসহায় দুস্থ শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ বোয়ালখালীতে বরযাত্রীবাহী টুকটুকি উল্টে যুবক গুরুতর আহত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী স্মরণে আজিমুশশান মাইজভান্ডারী মিলাদ মাহফিল

শিক্ষাবিদ সাংস্কৃতিক পণ্ডিত ক্ষেত্র মোহন পাল: একটি আলোকিত বাতিঘর। -সোহেল মো. ফখরুদ-দীন

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৩১ বার পড়া হয়েছে

কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাঁরা সময়ের চেয়ে বড় হয়ে ওঠেন, হয়ে ওঠেন একেকটি জীবন্ত অধ্যায়। তেমনই একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন ক্ষেত্র মোহন পাল, যিনি ‘ক্ষেত্র মাস্টার’ নামে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জীবন ছিল শিক্ষার জন্য, মানুষের জন্য, আর মানবিকতা রক্ষার জন্য এক অবিরাম সংগ্রাম।
আজ, ২০২৫ সালে এসে আমরা স্মরণ করছি সেই মহান শিক্ষককে, যিনি আমাদের স্মৃতিতে আজও জীবন্ত, আজও প্রাসঙ্গিক।

একজন শিক্ষক, এক সংগ্রামী জীবন: ক্ষেত্র মোহন পাল কেবল একজন শিক্ষক ছিলেন না – তিনি ছিলেন একজন চিন্তাশীল সমাজসেবক, সংস্কৃতির সাধক এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আলোকবর্তিকা। তাঁর সরলতা, নৈতিকতা ও জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ তাঁকে জনমানসে অসাধারণ মর্যাদা এনে দিয়েছিল।
২০০৬ সালে তোলা একটি ছবি আজও আমার মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। সেই ছবিতে আমি (সোহেল মো. ফখরুদ-দীন), মহিউদ্দিন চৌধুরী ইসা মাস্টার এবং ক্ষেত্র মাস্টার – তিনজনই ছিলাম। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সেই ছবির একান্ত স্মৃতিগুলো আজ কেবলই অতীত হয়ে রয়ে গেছে। কারণ, প্রায় এক দশক আগে ক্ষেত্র মাস্টার পাড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে।

মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ অধ্যায় : ক্ষেত্র মোহন পালের জীবনের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অধ্যায় ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের পালপাড়ায় তাঁর স্ত্রী আলোরানী পালসহ ১৭ জন নিরীহ নারী-পুরুষকে ঘরের ভেতর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। ইতিহাসের এই নির্মম অধ্যায় আজও আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এত বড় মানবতাবিরোধী অপরাধের আজও বিচার হয়নি, হয়নি কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও পায়নি ।
ক্ষেত্র মাস্টার কোনোদিন সেই অন্যায়ের জন্য সমাজের কাছে দাবি তোলেননি। তিনি আক্ষেপ করেননি। বরং সমস্ত দুঃখ বুকের মধ্যে ধারণ করে আবার ফিরে গেছেন শিক্ষার পাঠশালায় – শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে, মূল্যবোধ শেখাতে, মানুষ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে।

এক আলোকিত উত্তরাধিকার: ক্ষেত্র মোহন পাল ছিলেন এমন একজন শিক্ষক, যাঁর পাঠদান সীমাবদ্ধ ছিল না শুধু পাঠ্যবইয়ে। তিনি শিখিয়েছেন মানবতা, নৈতিকতা, এবং সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা। তাঁর শিক্ষাদান ছিল চিন্তা ও চেতনার ভিত্তি গঠনের জন্য। শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, সমাজের বিশিষ্টজনরাও তাঁকে সম্মান ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন। চন্দনাইশের রূপকার, প্রাক্তন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ড. কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁকে বন্ধু বলে উল্লেখ করতেন, সম্মানিত করতেন।
কমরেড মুহাম্মদ মুসা, আবদুল নবী ও ভূপন পাল তাঁকে দেখতেন ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চার এক জীবন্ত প্রতীক হিসেবে – একজন সমাজ-শিক্ষক হিসেবে বরণ করতেন। ক্ষেত্র মোহন পাল ছিলেন একাধারে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সমাজ চিন্তক এবং সময়ের সাক্ষ্য বহনকারী।ক্ষেত্র মোহন পাল আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝেই রয়ে গেছে – শিক্ষার্থী, সমাজ এবং ইতিহাসের পাতায়। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন শিক্ষা কেবল পেশা নয়, এটি দায়িত্ব, এটি উত্তরাধিকার।
আজ, তাঁর শূন্যতা আমাদের ব্যথিত করে; কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ আমাদের সাহস জোগায়, আশার আলো দেখায়।
তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকুক – এটাই আমাদের হৃদয়ের প্রার্থনা।

লেখক:
সভাপতি, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইচআরসি), বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট