জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃ-ত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নামে দেশে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দেশে তাদের কত সম্পদ য়াছে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের ফলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল কত টাকা বা কী পরিমাণ সম্পত্তির মালিক।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা (গোপালগঞ্জ-৩) ও আসাদুজ্জামান খান কামাল (ঢাকা-১২) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া দুই প্রার্থীর হলফনামায় দেখা গেছে, শেখ হাসিনা ৪ কোটির কিছু বেশি ও আসাদুজ্জামান খান ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তির মালিক। ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনার নিজের নামে সম্পদ কত?
ইসিতে জমা দেওয়া হলফ নামায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নামে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখা গেছে। নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার নিজের হাতে নগদ অর্থ দেখিয়েছিলেন সাড়ে ২৮ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ। ছিল ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৫৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর)। উপহার থেকে পাওয়াসহ তিনটি মোটরগাড়ি দেখিয়েছিলেন ইসিতে। তবে এগুলোর দাম কত তা উল্লেখ করা হয়নি। ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার স্বর্ণসহ মূল্যবান ধাতু দেখিয়েছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও ১৫ দশমিক ৩ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে, যার ক্রয়কৃত অংশের মূল্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ সদর, গাজীপুর ও রংপুরে।
ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ঢাকার পূর্বাচলে একটি প্লট রয়েছে শেখ হাসিনার নামে, যার দাম ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। হলফনামায় শেখ হাসিনা তিনতলা ভবনসহ ৬ দশমিক ১০ শতক (আংশিক) জমি নিজের নামে দেখিয়েছেন। এই জমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এর অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে হাসিনার নিজের নামে আছে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সম্পদ।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তিনি যে হলফনামা দিয়েছিলেন, তাতে ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। আসাদুজ্জামান খান হাতে নগদ দেখিয়েছিলেন ৮৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেখান ৮২ লাখ টাকার মতো। বন্ড ও শেয়ার ছিল প্রায় ২৪ লাখ টাকার। ডাকঘর, সঞ্চয়পত্র অথবা স্থায়ী আমানত দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ১ লাখ টাকা।
আসাদুজ্জামান খান দুটি মোটরগাড়ির দাম দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও আসবাব ছিল ২ লাখ টাকার। তিনি ঋণ বাবদ ব্যবসার মূলধন দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকার। সোনা দেখান ১০ ভরি, তবে দাম উল্লেখ ছিল না।
হলফনামা অনুযায়ী, আসাদুজ্জামান খানের কৃষিজমির পরিমাণ ১৭১ শতাংশ (৫ বিঘার বেশি), যার অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। অকৃষি জমি সাড়ে ১৮ শতাংশ, যার অর্জনকালীন মূল্য সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা। তিনি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে দুটি সম্পদের মূল্য দেখিয়েছেন। একটি গ্রামের বাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন, যার অর্জনকালীন মূল্য ৮০ লাখ টাকা। অন্যদিকে, আরেকটির মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অর্থমূল্য ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো, এছাড়া আছে আরও ১০ ভরি স্বর্ণ।
লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ সম্পাদিত ও হাজী জসিম উদ্দিন প্রকাশিত