মানবিকতা আজ কোথায়? সবাই শুধু নিজের স্বার্থটাই বোঝে। এত ক্ষতিগ্রস্ত এত বিপদ সবাই শুধু নিচের ফোনটা বের করে ভিডিওতে ব্যস্ত, কিংবা অহেতুক ভিড়। এগুলো উদ্ধার কাজে ব্যাহত ঘটায়। এদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা দরকার। যারা এভাবে উদ্ধার কাজে ব্যাহত ঘটায় তারা সত্যিই অপরাধী, ভিডিওম্যানরা যদি পরিস্থিতিটা নিজেকে দিয়ে বিবেচনা করত আদৌ তারা কি ভিডিও করতো, বিপদ থেকে উদ্ধার না করে? ৩০০ টাকায় ১ লিটার পানি খেতে হয়! মনে রাখা প্রয়োজন আল্লাহ সবকিছু দেখে এবং জানে সব কিছুর বিচার হবে। টিকটক নামক সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভুয়া সাংবাদিক সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া অতীব জরুরি। যারা পানির দাম অনেক বেশি রেখেছে তারা মৃত্যু কালে পানির জন্য যেন হাহাকার করে মরে।
এটাই আজকের সমাজের নির্মম বাস্তবতা।আগে মানুষ বিপদে পড়লে চারপাশে ছুটে আসত সাহায্যের হাত বাড়াতে, এখন সবাই ছুটে আসে মোবাইলের ক্যামেরা অন করতে। মানুষের ব্যথা আর কান্না এখন যেন কনটেন্টের অংশ হয়ে গেছে। কেউ বাঁচছে না, কেউ বাঁচাচ্ছে না—সবাই শুধু দৃশ্য ধারণ করছে। এই অমানবিক পরিবর্তন আমাদের চিন্তাভাবনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। মানুষ কবে আবার মানুষ হবে?
দিন দিন একটা অসুস্থ জেনারেশন তৈরী হচ্ছে। সেইসাথে বুড়ো গুলোরও ভীমরতি ধরছে। মানুষ হিসেবে আমরা লজ্জিত। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মানুষের অর্থ ইনকাম বন্ধ করে দিলে সবকিছু সমাধান হবে। আমাদের লজ্জা শরম কিছুই নাই। ভিডিও ফুটেজে দেখেছি যে ছেলেটা মাহাতাব ছোট একটা পোড়া শরীর রাস্তায় রাস্তায় অসহায় হয়ে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে, গায়ে শুধু কোমড়ে প্যান্টের কিছু অংশ আস্ত আছে। আশেপাশে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশার অভাব নেই অথচ কোনো চালক নিজে এগিয়ে এসে বাচ্চা ছেলেটাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে দিয়ে আসার মানসিকতা কারোর মধ্যে দেখা গেলনা। কি আজব মানুষের দেশ আমাদের দেশটা অথচ ভারতকে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই তাদের। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাড়ি কোনটাই বাদ যায়না ভারত বিদ্বেষী মন্তব্যের। অথচ তারা জানেও না তারা ভারতের লোকদের থেকেও আরো একধাপ এগিয়ে। ভিডিওটা যতই চোখে পড়ে ঘৃণা এমনিতেই চলে আসে এমন দেশে জন্ম নিয়েছি যেখানে মনুষ্যত্বের ছিটেফোঁটাও নেই। দেশে ৮০-৯০% মানুষ এখন মানসিক বিকারগ্রস্ত। কনটেন্ট মনিটাইজেশনের নামে বিকৃত নেশা।
যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে বা জাতির ক্রান্তিলগ্ন আসে ঠিক তখনই কিছু নিষ্ঠুর বিকৃত মনের মানুষ ফোন হাতে ছুটে আসে ভিডিও করতে। তাদের চোখে মৃতদেহ, কান্নারত মানুষ, রক্তাক্ত রাস্তাও কেবল “কনটেন্ট”।এরা মানুষের নয়, ভিউয়ের পূজারি।
আপনি রাস্তার পাশে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকলেও এদের কাছে আপনি একটা ভিডিও ক্লিপ মাত্র। আহত মানুষের কান্না এই বিকৃত শ্রেণীর লোকদের কাছে যেন ইমোশনাল সাউন্ড ইফেক্ট। এদের ভেতরে নেই কোনো মানসিক ব্যথা, নেই কোনো নৈতিকতা, নেই কোনো আবেগ।
লেখকঃ চেয়ারম্যান, গড়বো বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন
লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ সম্পাদিত ও হাজী জসিম উদ্দিন প্রকাশিত