বোয়ালখালী প্রতিনিধি:
চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের বাসন্তী পূজা—যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আদি দুর্গাপূজা হিসেবে পরিচিত—এবারও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের সন্ন্যাসী পাহাড়ে অবস্থিত শ্রী শ্রী চন্ডীতীর্থ ও মেধস আশ্রমে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে। মহাসপ্তমীর দিনে আশ্রম প্রাঙ্গণ ছিল ভক্ত-অনুরাগীদের ভিড়ে মুখরিত।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, সত্য যুগে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য ঋষি মেধসের নির্দেশে এই পাহাড়েই প্রথমবার দশভূজা দুর্গাদেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি স্থাপন করে পূজা করেন। এটিই ইতিহাসে ‘বাসন্তী পূজা’ নামে পরিচিতি পায়। আশ্রম পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী বলেন, “এই স্থানেই সর্বপ্রথম মর্ত্যলোকে দুর্গাদেবীর পূজা হয়। পরবর্তীতে শরৎকালে রামচন্দ্রের অকাল বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সূচনা হয়।”
প্রাক্তন জেলা প্রশাসক দেবাশীষ নাগ বলেন, “দীর্ঘদিন পর আশ্রমে এসে মন ভরে গেছে। চৈত্রের ষষ্ঠীতে সন্ন্যাসী পাহাড় যেন এক ধর্মীয় মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে।”
৬৮ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ আশ্রমে যেতে হলে কয়েকশ সিঁড়ি বেয়ে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচুতে উঠতে হয়। আশ্রম চত্বরে রয়েছে গণেশ মন্দির, চণ্ডী মন্দির এবং আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বেদানন্দের সমাধিপীঠ। চারদিকে ছায়াঘেরা প্রকৃতি ও পাখির কোলাহলে পূজার আবহে এক অনন্য অনুভূতি তৈরি হয়।
মেধস আশ্রমের অধ্যক্ষ বুলবুলানন্দ মহারাজ জানান, “একসময় এ পূজায় মানুষের উপস্থিতি সীমিত ছিল। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দুর-দুরান্ত থেকে ভক্তরা আসছেন। এখান থেকেই দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছে, যা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
এ বছর বোয়ালখালী উপজেলার মেধস আশ্রমসহ মোট ২৫টি মণ্ডপে বাসন্তী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বোয়ালখালী শাখার সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস জানান, পূজাকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি রয়েছে।
ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হওয়া এ পূজা চলবে আগামী ৭ এপ্রিল বিজয়া দশমী পর্যন্ত, যেখানে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ সম্পাদিত ও হাজী জসিম উদ্দিন প্রকাশিত