রবিউল হাসান, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী):
ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়ক ঘেষে ১৯৬০ সালে গড়ে ওঠে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট বজরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পরে সোনাইমুড়ী উপজেলা গঠিত হলে হাসপাতালটি সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে নামকরণ করা হয়। ২০০৬ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়, তবে জনবল সংকট। মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অভাবে উপজেলা বাসীর কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানটি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সেবার মান বাড়েনি এখানে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য বলছে, হাসপাতালে ১১ জন কনসালটেন্টের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র চার জন। ১৭টি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন চার জন। ২১ জন নার্সের দায়িত্ব রয়েছে আট জনের কাঁধে। মিডওয়াইফ চারজনের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ১ জন। নৈশপ্রহরী ৩ টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ১ জন, আর ক্লিনার ৮ জনের স্থলে রয়েছেন ৪ জন। এভাবেই জনবলের অভাবে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে চলছে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুব্রত জোতদার, শিশু বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম, এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ আক্তার হোসেন অভি, সার্জারী বিশেষজ্ঞ সুমনা আফরোজ রয়েছেন। গাইনী বিশেষজ্ঞ সোহানা শিকদার গত ছয় মাসপূর্বে অন্যত্র বলদি হওয়ার পর পদটি শূন্য রয়েছে। এই পদে বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রসূতি সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ১৭ পদের স্থলে ডাঃ রিয়াজুর রহমান রিয়াদ, ডাঃ তাহমিনা আলম, ডাঃ ইফতেখাইরুল ইসলাম ও ডাঃ সোহরাব হোসেন মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে ডাঃ সোহরাব হোসেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মাঝে মাঝে এই হাসপাতালে রোগী দেখেন। উপজেলার ৪ লাখ বাসিন্দার বিপরীতে সার্বক্ষণিক সেবার জন্য রয়েছেন মাত্র তিনজন মেডিকেল অফিসার।
হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর নেই। তিনজন নৈশপ্রহরীর স্থলে রয়েছেন একজন। বিভিন্ন সময় চুরি হয়ে যাচ্ছে রোগীদের মূল্যবান জিনিসপত্র। মূল ভবন ও আবাসিক কোয়ার্টারের দরজা, জানালা, গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া সন্ধ্যার পরে মাদকসেবীদের আনাগোনায় অনিরাপদ হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প:প: কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জাহান বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করলেও তার সুরাহা মেলেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের উপচে পড়া ভীড় বহির্বিভাগে। আর এমন পরিস্থিতিতে হিমসিম খাচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া ডিউটি ডাক্তার ও নার্স সংকট থাকায় যথাযথ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ভর্তি রোগীরা। ক্লিনার সংকট থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেও বেগ পেতে হচ্ছে কর্মীদের। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার চার লাখ মানুষের সেবা দিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় মেডিকেল মেশিনারিজ ও বিকল্প বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সংকট: স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ৮ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে এক্স-রে সেবা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারে বারে মেরামত করে চালানো হলেও পুরাতন মডেলের এক্স-রে মেশিনটি মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ডায়াগনস্টিক ল্যাবের কার্যক্রম বিভিন্ন সময় বন্ধ থাকছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। বিদ্যুত বিভ্রাটের কারনে বিভিন্ন রোগের পরিক্ষা-নিরিক্ষার কাজ সুষ্ঠ ভাবে করতে পারছেন না ল্যাব টেকনিশিয়ানরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই হাসপাতালে নেই জেনারেটর ব্যবস্থা। রাতের বেলায় বিদ্যুত চলে গেলে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জুড়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী না থাকায় জরুরি ও বহির্বিভাগে সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালটি নোয়াখালী-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাজনিত রোগীর চাপ থাকে। সেসময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেও বেগ পেতে হয়। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জাহান জানান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, মেডিকেল অফিসার ও কর্মচারী নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ না থাকায় সিজার বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। একজন মিডওয়াইফ দিয়ে ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে রোগীদের বাইরের হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসকারীরা বাসার বরাদ্দ বাতিল করেছেন। প্রায় সময় রোগীদের মোবাইল সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। জেনারেটর না থাকায় লোডশেডিং হলে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখতে হয় অনেক সময় ।