মো. কামাল উদ্দিন
সে যেন হঠাৎ করেই ফুটে ওঠা এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যা। ধীরে ধীরে নেমে আসা এক মায়াবী আবরণ—আলো-আঁধারির খেলায় সে যখন সামনে আসে, তখন পুরো জগত থমকে যায়। তার ছবি দেখে মনে হয়, সময় যেন থেমে আছে। এই থেমে থাকা সময়ের মাঝেই তার চোখ দুটি যেন কথা বলে যায় অবিরাম। কে সে? নাম জানার প্রয়োজন হয় না, কারণ সে নিজেই এক নাম—সে নীলাঞ্জনা, সে এক কাব্যের নাম, এক অনুভবের নাম, এক অব্যক্ত প্রেমের নাম।
ছবির নারীর চাহনি যেন জ্যোৎস্নায় ভেজা নদীর মত, নরম, নিঃশব্দ, অথচ প্রবল টানে ভরপুর। তার চোখের গভীরতা আপনাকে নিয়ে যাবে এমন এক ভুবনে, যেখানে শব্দের প্রয়োজন নেই—দেখলেই বোঝা যায়, এখানে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। ওই চোখ দুটি যেন আয়না, যেখানে নিজেরই কিছু না বলা কথা খুঁজে পাওয়া যায়।
সে পরেছে এক হালকা স্বর্ণাভ পোশাক, যার উপর পরানো বেগুনি জমিনের কাজ করা ওড়না। এই রঙ দুটি যেন বিপরীতের স্নিগ্ধ মিলন—একদিকে স্থিরতা, অন্যদিকে আবেগের চঞ্চলতা। তার পোশাকে কোনো বাহুল্য নেই, আছে মাধুর্য। এই মাধুর্য তার ব্যক্তিত্বে ছড়িয়ে আছে প্রতিটি রেখায়, প্রতিটি দৃষ্টিতে। বেগুনি রঙের এই ওড়নায় সোনালি কারুকাজ, যেন তার জীবনের গল্প—ঝলমলে কিন্তু সংযত।
চোখ দুটি বড়ো, কালি দিয়ে ঠিক যতটা সাজানো দরকার, তার বেশি নয়। এ চোখ সাজানো নয়, বরং চোখ নিজের সৌন্দর্যে সাজিয়েছে পৃথিবীকে। সেখানে ক্লান্তি নেই, আছে নিরব প্রেম, গভীর প্রত্যাশা আর অনন্ত অপেক্ষা। এই চোখে সে শুধু তাকিয়ে থাকে না, সে বোঝে, অনুভব করে, ও গভীরভাবে অনুভব করায়।
নীলাঞ্জনার ঠোঁটের হাসিটুকু যেন বিদ্যুৎ চমকের মতো—এক ঝলকেই আলোকিত করে দেয় ভেতরের অন্ধকার। এই হাসিতে কোনো জোর নেই, নেই কোনো সাজানো আবরণ, এটি এক অন্তরঙ্গ প্রকাশ, যে হাসিতে আপনি নিজেকে খুঁজে পাবেন, হয়তো হারিয়ে যাবেন। তার ঠোঁটের লালচে আভা যেন গ্রীষ্মের শেষ বিকেলের সূর্য—উষ্ণ, দীপ্ত, অথচ কোমল।
এই নারীর সৌন্দর্য বাহ্যিকতার বাইরে গিয়ে গভীরে প্রবেশ করে। সে যেন এক বইয়ের পাতা—যেখানে প্রতিটি লাইন পড়লে অনুভূতির নতুন দরজা খুলে যায়। তার এই স্থিরতা, এই আত্মবিশ্বাস, এই দৃঢ়তা যেন বলে—সে কেবল একটি মুখ নয়, সে একটি চরিত্র। সময় তাকে গড়েছে, ব্যথা তাকে শিখিয়েছে, ভালোবাসা তাকে সৌন্দর্য দিয়েছে।
কেউ কেউ চোখ দিয়ে দেখে, কেউ কেউ চোখ দিয়ে বলে। আর নীলাঞ্জনা চোখ দিয়ে কবিতা লেখে। সে সেই কবি, যার কলম নয়, চোখ তার ভাষা। আপনি যখন তার দিকে তাকাবেন, তখন বুঝতে পারবেন, কীভাবে এক নারী তার আত্মাকে এমন নিখুঁতভাবে বহন করতে পারে। তার চোখে আছে এক লুকানো নদী, যেটা আপনাকে ধীরে ধীরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এক অচেনা স্থিরতায়।
এই নারীকে দেখলে মনে হয়, সে বুঝি রূপকথার রাজ্য থেকে নেমে এসেছে আমাদের বাস্তব পৃথিবীতে। তাকে দেখে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের একটি পঙ্ক্তি—
"যে চোখ দেখে না সে চোখ নয়, যে দেখায় সে হৃদয়..."
নীলাঞ্জনার চোখ এমনই এক হৃদয়ের দৃষ্টি, যা আপনাকে শুধু দেখায় না, আপনাকে এক অনন্ত অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যায়।
তার ছবিটি কোনো ফটোগ্রাফ নয়, এটি এক জীবনভাষ্য। এটি দাঁড়িয়ে আছে বাস্তব আর কল্পনার সীমানায়। এই ছবির পেছনে আছে এক বর্ণিল গল্প, এক না বলা প্রেম, এক গভীর প্রত্যাশা। আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে নীলাঞ্জনা—শান্ত, স্থির, অথচ জীবনের সমস্ত উথাল-পাথাল অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য বহন করে।
সে কোনো সেলিব্রিটি নয়, তবু তার চোখে জ্বলছে এক নক্ষত্রের দীপ্তি। সে কোনো সাহিত্যিক নয়, তবু তার মুখে আছে কবিতার ছায়া। সে কোনো পেইন্টার নয়, তবু তার উপস্থিতিতেই সৃষ্টি হয় এক শিল্পকর্ম।
আমার হৃদয়ে তার নামই হয়ে থাকবে—নীলাঞ্জনা, কারণ তার চোখে নীল রঙের ছোঁয়া আছে, তার উপস্থিতিতে আছে চঞ্চলতা আর কোমলতা—ঠিক যেমন গোধূলির আকাশ।
তাকে একবার দেখলেই বুঝবেন—কিছু সৌন্দর্য বোঝানো যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। কিছু চোখ কেবল চোখ নয়, তারা হৃদয়ের দর্পণ। আর কিছু মানুষ, তারা কেবল ছবি নয়—তারা কবিতা হয়ে থাকে চিরকাল।
লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ সম্পাদিত ও হাজী জসিম উদ্দিন প্রকাশিত