ডেক্সরিপোট- বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। অর্থনীতি, সমুদ্র বন্দর, শিল্প এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এখান থেকে প্রতিবছর জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে চট্টগ্রাম রয়ে গেছে ঢাকা কেন্দ্রিকতার ছায়ায়।
বন্দরনগরীর অবদান : চট্টগ্রাম শুধু বন্দর নয়, এটি দেশের অন্যতম শিল্পভিত্তিক শহর। কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে শত শত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ইস্পাত, টেক্সটাইল, শিপবিল্ডিং, কেমিক্যাল, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ বহু সেক্টর। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামেই অবস্থিত, যেখানে প্রতিদিন শত শত জাহাজ লোড-আনলোড হয়।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE), কাপ্তাই হ্রদ, হালদা নদী (একমাত্র প্রাকৃতিক রুইজাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র), সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সহ সব মিলিয়ে এটি একটি ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্বসম্পন্ন এলাকা।
কেন্দ্রিকতার অযৌক্তিকতা : বাংলাদেশে প্রায় ৯৫% প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সরকারি প্রধান দপ্তর ঢাকা কেন্দ্রীভূত। চট্টগ্রামের মত গুরুত্বপূর্ণ শহরে নেই পূর্ণাঙ্গ সচিবালয়, নেই স্বতন্ত্র পরিকল্পনা বোর্ড বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা। উন্নয়ন প্রকল্প, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, সরকারি চাকরি—সব ক্ষেত্রেই ঢাকার প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।
চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও বিদেশি ফ্লাইটের সংখ্যা সীমিত; মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি হাব কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বারবার দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন খুবই ধীর। অধিকাংশ সরকারি সিদ্ধান্ত ও প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঢাকায় ধর্ণা দিতে হয়। চট্টগ্রামের প্রতি রাষ্ট্রীয় দৃষ্টি প্রসার জরুরি
বহুজাতিক দেশগুলোতে রাজধানীর বাইরের শহরগুলোতেও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। যেমন – ভারতের বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক; তারা শুধু রাজধানী না হয়েও দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিকশিত। অথচ বাংলাদেশে চট্টগ্রামকে কেবল ব্যবসার ক্ষেত্র মনে করে, নীতিনির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
উপসংহার : বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মেগাসিটিকে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় অংশীদার করা অত্যন্ত জরুরি।
চট্টগ্রাম শুধু দ্বিতীয় রাজধানী নামে নয়, কার্যকরভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নগরী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার দাবি রাখে।
মঈনুল আলম ছোটন,
আহ্বায়ক – শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ,
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা।সাবেক সদস্য (দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত), আহ্বায়ক কমিটি,
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি।