1. info@www.dainikdeshbarta.com : bissho sangbad Online : bissho sangbad Online
  2. info@www.dainikdeshbarta.com : Dainik Desh Barta :
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
চট্টগ্রামে  কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু বোয়ালখালীতে সড়কে মালামাল রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, ব্যবসায়ীকে জরিমানা পটিয়া সচেতন নাগরিক ফোরামের পরিচিতি সভায় যুব ফোরাম ও ছাত্র ফোরামের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বোয়ালখালীতে ব্লু বার্ডস স্কুলের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা বোয়ালখালীতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ  বোয়ালখালীতে গাউসিয়া কমিটির উদ্যোগে জশনে জুলুস কালুরঘাট ফেরিঘাটের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন নজরুল চর্চায় নাগরিক স্বাধীন চেতনার উন্মেষ: নজরুল চর্চায় নাগরিক স্বাধীন চেতনার উন্মেষ চন্দনাইশে জশনে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা:) মাহফিল অনুষ্ঠিত রজায়ী যুব ত্বরিকত কমিটি বাংলাদেশ’র জশনে জুলুছ সম্পন্ন

ক্ষণজন্মা মনীষী মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

মাওলানা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক। তিনি ২২ আগস্ট ১৮৭৫ চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলার বরমা-আড়ালিয়ার চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাচীন চট্টগ্রামের নাম ইসলামাবাদের অনুসারে নামের শেষে ‘ইসলামাবাদী’ শব্দ গ্রহণ করেন। মাওলানা মনিরুজ্জামানের পূর্বপুরুষের পরিচিতি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নসরত শাহর কাছ থেকে প্রচুর জায়গির পেয়ে তাঁরা হয়ে উঠলেন বিশাল সম্পদশালী। তাঁদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। শিক্ষায়, জ্ঞানে, আদর্শে, মহানুভবতায় তাঁরা ছিলেন শীর্ষে।

এই প্রভাবশালী ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার বিখ্যাত মনীষী মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। পিতার নাম মোহাম্মদ মতিউল্লাহ। আর মাতার নাম রহিমা বিবি। মনিরুজ্জামান ছিলেন পিতা-মাতার নয়নের মণি। আদরের সন্তান। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর জন্মস্থানের ঐতিহাসিক গ্রামটি এখন ‘বাইনজুড়ি’ নামে পরিচিত। মনিরুজ্জামানের পিতা মতিউল্লাহ ছিলেন প্রবল শিক্ষানুরাগী। তিনি ফারসি লেখক ও কবি হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন। এলাকায় তিনি মতিউল্লাহ পণ্ডিত নামে সুপরিচিত ছিলেন।
মনিরুজ্জামানের জন্মসন ও জন্মস্থান নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে একটি বিতর্কের ছায়া বা একাধিক মতের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ১৯৪৫ সালে একটি কবিতায় লেখেন।
ষাটের উপর আরও দশ বছর
বৃথায় কেটেছে জীবন আমার।
এ উক্তি থেকে বোঝা যায় যে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি কোনো সময় তিনি মায়ের কোল আলো করে ভূমিষ্ঠ হন।
পারিবারিক পরিমণ্ডলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা গমন করেন। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি সরকারি মাদরাসা থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। আরবি, উর্দু, ফারসি ভাষায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করলেও বাংলা ভাষা চর্চায় ছিল বিশেষ মনোযোগ। মাওলানা ইসলামাবাদী শিক্ষাজীবন শেষে রংপুর হারাগাছ মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মাদরাসা অধ্যক্ষ হিসেবে কিছুদিন চাকরি করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সে সময় বাংলা-আসামে বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসা স্থাপনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কলকাতা থাকাকালীন মাওলানা জৈনপুরীর আদর্শে ইসলাম প্রচার, স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের আদর্শে মুসলিম জাগরণ, নওয়াব আব্দুল লতিফের আদর্শে শিক্ষা বিস্তার ও জামাল উদ্দিন আফগানির ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধে প্রভাবিত হন।
মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সূত্রে সোলতান (১৯০১), হাবলুল মতিন (১৯১২), মুহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনূর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) ও আল-এসলাম (১৯১৩) পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় লেখালেখি করতেন। সে সময় মিসর থেকে প্রকাশিত আল মিনার, আল-ইহরাম, আল-বিলাদেও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ফারসি দৈনিক পত্রিকা হাবলুল মতিনের বাংলা সংস্করণ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম থেকে মাসিক ইসলামাবাদ নামেও একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে নিয়ে কলকাতা থেকে সাপ্তাহিক সোলতান পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইসলামাবাদী ও অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় আঞ্জুমানে উলামায়ে বাংলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি ছিলেন এর যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর বঙ্গীয় প্রাদেশিক শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম কনফারেন্সের আয়োজন করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘মুসলিম সাহিত্য সমিতি’ প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মাওলানা রাজনৈতিকভাবে প্রথম দিকে কংগ্রেসে সম্পৃক্ত থাকলেও ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। ইসলামাবাদী ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের অন্যতম স্থপতি।
১৯২৯ সালে মাদরাসা ছাত্রদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত আসাম-বেঙ্গল জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সম্পাদক ছিলেন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কৃষক প্রজা পার্টির মনোনয়নে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য মাওলানা ইসলামাবাদী মহাত্মা গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে দিল্লির লাল কেল্লায় বন্দি ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি আবারও আটক হন।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন, যা পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জনাব আহমদ হোসাইনের একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেন, ‘স্বজাতির কল্যাণ কামনার চেতনা ও স্বজাত্যবোধের ক্ষেত্রে তিনি মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। এই অনুপ্রেরণাই তাঁকে ভাষা আন্দোলন পরিচালনা ও বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করেছে।’ (মুকুল চৌধুরী সম্পাদিত, অগ্রপথিক সংকলন ভাষা আন্দোলন, পৃষ্ঠা ৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল ১৯৯৩)
চট্টগ্রামের দক্ষিণ মহকুমার কর্ণফুলীর তীরবর্তী দেয়াং পাহাড়ে জাতীয় আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল তাঁর আজীবন। ১৯১৫ সালে তিনি সেই লক্ষ্যে সরকার থেকে ৬০০ বিঘা জমি ও ওই এলাকার জমিদার আলী খান থেকে ৫০০ কানি ভূমি রেজিস্ট্রি মূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গ্রহণ করেছিলেন। মুসলিম রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা শওকত আলী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। দেয়াং পাহাড়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই স্থান পরিদর্শনে এসে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা আকরম খাঁ, মুন্সী রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে।
মাওলানা ইসলামাবাদী ৪২টির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলোর মধ্যে ১. ভারতে মুসলিম সভ্যতা, ২. সমাজ সংস্কার, ৩. ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমান, ৪. ইসলাম জগতের অভ্যুত্থান, ৫. ভারতে ইসলাম প্রচার, ৬. সুদ সমস্যা, ৭. ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান (৩ খণ্ডে), ৮. ইসলামী শিক্ষা, ৯. কোরআন ও বিজ্ঞান, ১০. আত্মজীবনী ইত্যাদি উল্লেযোগ্য।
তিনি ১৯৫০ সালের ২৪ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।
লেখকঃ সভাপতি, পটিয়া ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট