রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন উত্তর পদুয়া নারিশ্চা গ্রামের প্রসিদ্ধ সাত্তারিয়া দরবার শরীফে ১৯ ও২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ খ্রি. হযরত শাহ্ সূফী মাওলানা সৈয়দ আবদুস সাত্তার শাহ্ নক্বশবন্দী (রাহ্)-এর ৫৬ তম সালানা উরস শরীফ উপলক্ষে স্থানীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আযীমুশশান মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উরস পরিচালনা কমিটির ব্যবস্থাপনায় ও শহীদ সৈয়দ খাজা আহমদ ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ১৯ ফেব্রুয়ারী, বুধবার ১ম দিবসের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন দরবারের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মুহাম্মদ আহসানুল হুদা সাব্বির।
প্রধান অতিথি ছিলেন হযরত মাওলানা সৈয়দ আমীনুল হক আলক্বাদেরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাওলানা সাদেকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা হাফিয শাহ্ আলম নঈমী আশরাফী, মাওলানা ওবাইদুল মোস্তফা নঈমী আশরাফী, মাওলানা আবুল ফারাহ্ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, মাওলানা সালেকুল মাওলা আলক্বাদেরী, ইসলামী সাহিত্যিক ও মানবাধিকার গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার, শাহযাদাহ্ হাফিয সৈয়দ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন, আঞ্জুমানে নঈমিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারী মাওলানা মুহাম্মদ নূরুল আমীন রিজভী আশরাফী, দক্ষিণ শিলক ত্বৈয়্যবিয়া নূরিয়া সাত্তারিয়া দাখিল মাদরাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাওলানা কাজী মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নঈমী, মানবাধিকার সংস্থা পদুয়া ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ করিম উদ্দীন নূরী ও পীরযাদাহ্ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম রসুল নঈমী।
উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আলিমেদীন, মানবাধিকার কর্মী মাওলানা কাজী মুহাম্মদ আবদুল হামীদ নঈমী।
তাক্বরীর করেন মাওলানা ওমর ফারুক নঈমী, মাওলানা নূর মোহাম্মদ আলক্বাদেরী, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল আজিজ রিজভী, মাওলানা মুহাম্মদ খাইরুল আমীন চিশতী, মাওলানা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম রিজভী ও মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
তাক্বরীরে উলামায়ে কেরাম বলেন, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে সালাত ক্বায়িমের পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের নীতি-আদর্শ প্রতিষ্ঠায় স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। মুসলমানদের প্রাত্যহিক জীবন-জীবিকা ও প্রতিটি কাজ-কর্ম ইসলামসম্মত হতে হবে। রাজনীতিও এর বাইরে নয়। রাষ্ট্রে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ৯০% ভাগ মুসলমানের এ দেশে ইসলামী রাজনীতির প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করতে হবে। মাযহাব, ত্বরীক্বাহ্ ও আক্বীদাহ্ বিষয়ে আমলগত ভিন্নতার পরও রাজনৈতিক অঙ্গনে পারষ্পরিক সংহতি দরকার। অতীতে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষবাদী, সমাজতন্ত্রবাদী, পুঁজিবাদী, নাস্তিক্যবাদী ইত্যাদি অনৈসলামী দলগুলো পারষ্পরিক সমঝোতা ও জোটবদ্ধ নির্বাচন করে জয়ী হয়। তারা ক্ষমতাসীন হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের রাষ্ট্রীয় সংবিধান, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী চেতনা, ভাবধারা, আদর্শ ও আবহ লুপ্ত করে মুসলিমপ্রধান এ দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস চালিয়েছে। তাই ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর স্ব স্ব নীতি-আদর্শ, আক্বীদাহ্-আমলে ঐকমত্য পোষণ বা আপস না করেও মুসলিম জাতিসত্ত্বার অস্থিত্ব রক্ষায় এবং স্বাভাবিকভাবে ইসলামের শাশ্বত নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের পারষ্পরিক ঐক্য-সংহতির পরিবেশ সৃষ্টি সময়ের অপরিহার্য দাবী। তবে ওয়ায়িয, মুবাল্লিগদের বলনে-লিখনে সর্বাবস্থায় নবী-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অতুলনীয় মর্যাদার প্রতি পরিচ্ছন্ন মনোভাব পোষণ করতে হবে। প্রকৃত আউলিয়ায়ে কেরাম ও বুযর্গানেদীনের শান-মান রক্ষায় শিষ্টাচারিতা বজায় রাখতে হবে। অনৈক্যের অনুষঙ্গ, প্রসঙ্গ তৈরি হতে পারে, এমন কথা-কাজ ও লেখালেখি থেকে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সংঘটিত অতীতের পারস্পরিক দোষ-ত্রুটি ও ভুল-ভ্রান্তির পুনরাবৃত্তি পরিহার করে মুসলিম ঐক্যে দূরদর্শিতায় অভ্যস্ত হতে হবে।
মাহফিলে ইসলামী দলগুলোর গতিশীলতা আনয়নে নীতিনির্ধারকদের সময়োচিত গভীর ভাবনা ও উদারচিন্তার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মাহফিলে শহীদ সৈয়দ খাজা আহমদ (রাহ্.)-এর পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ শামসুল হুদা, সৈয়দ মুহাম্মদ নজমুল হুদা, সৈয়দ মুহাম্মদ মঞ্জুরুল হুদাকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের পর মীলাদ শেষে প্রধান অতিথি হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আমীনুল হক্ব আলক্বাদেরীর মুনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথম দিবসের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয় দিবসে খতমে কুরআন মাজীদ, খতমে বুখারী শরীফ, খতমে মাজমূয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খতমে গাউসিয়া শরীফ ও মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। আখেরী মুনাজাত করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের চেয়ারম্যান মাওলানা কাজী মুহাম্মদ মুঈনউদ্দীন আশরাফী।