1. info@www.dainikdeshbarta.com : bissho sangbad Online : bissho sangbad Online
  2. info@www.dainikdeshbarta.com : Dainik Desh Barta :
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগে সুযোগ না দেওয়ায় মানববন্ধন করলো রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এর শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. দেলোয়ার হোসেনের ইন্তেকাল জমকালো আয়োজনে দোহাজারী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করলেন জাতীয় মহিলা ফুটবলর ঋতুপর্ণা চাকমা চট্টগ্রামে অসহায়দের মাঝে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এর শীতবস্ত্র বিতরণ বোয়ালখালীতে পিক-আপ মোটর সাইকেল সংঘর্ষে  দুই মোটরসাইকেল আরোহী আহত বোয়ালখালীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইল্ল্যার অউন ফোয়ানি উৎসব চন্দনাইশ বরকলে জামায়াতে ইসলামীর শীতবস্ত্র বিতরণ এপেক্স ক্লাব অব পটিয়ার উদ্যোগে শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। ইক্বরা মডেল মাদ্রাসায় সবক নিয়েছে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ চাটগাঁইয়া নওজোয়ান’র

সামাজিক অবক্ষয় -শাহিদা আকতার জাহান

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
  • ২২৬ বার পড়া হয়েছে

উপসম্পাদকীয়ঃ
অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ক্ষয়প্রাপ্তি’। বর্তমানে আমাদের পরিবারে,সমাজে রাষ্ট্রের সামাজিক, নৈতিক ধর্মীয়মূল্যবোধের অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করেছে। এমন কোন অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। কারণ সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ধৈর্য্য, উদারতা,মানবিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, নান্দনিক সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ও নৈতিক গুণাবলি নষ্ট হয়ে যাওয়াকে সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রতিষ্ঠানিক সুশিক্ষার ও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কারণ, সুশিক্ষা হলো জাতির মেরুদন্ড, সমাজের মেরুদণ্ড, পরিবারের মেরুদণ্ড ও বলা যায়। যে দেশে, শিক্ষা ব্যবস্থা যত উন্নত,মানসম্মত সেই সমাজে অবক্ষয় তত কম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষা,ধর্মীয় শিক্ষা নৈতিক শিক্ষা মানুষকে সকলগুণাবলী সম্পন্ন মানুষরূপে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। তাই সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আদর্শ মানুষ হিসেবে সন্তানকে গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ । পরিবার থেকে একজন শিশু তার জীবনে গ্রহণযোগ্য ও বর্জনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন। প্রথমত পরিবার থেকেই ভদ্রতা,মানবিকতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতাবোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ, পরোপকার, উদার মানসিকতা- এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। এইগুলোকে পারিবারিক শিক্ষার আওতায় আনা জরুরি। পরিবার থেকে সুশিক্ষা না পেলে একসময় সব শিক্ষাই ম্লান হয়ে যায়। সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ ধর্মহীনতা, অসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব এবং সর্বগ্রাসী অশ্লীলতার মতো আরও অনেক বিষয় আছে। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে সভ্য করে, আলোকিত করে, আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যায় । আজ ধর্মীয় শিক্ষা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আগের দিনে সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে ধর্মীয় চর্চ্চা করতে। আজ ধর্মীয় শিক্ষাকে ত্যাগ করে আমরা পুনরায় জাহেলিয়া, অসভ্য-বর্বরতার যুগেই ফিরে যাচ্ছি। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক শিক্ষা যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ধর্মীয় শিক্ষা ও অনেক বেশি প্রয়োজন। এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তার। এক কথায়, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত এই সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে মায়া-মমতা ভালোবাসা ও নাই বললে চলে। সামাজিক অবক্ষয়ে মধ্যে আবার নতুন করে যোগ হয়েছে বিয়ের আগে নারী ‘সিঙ্গল মাদার’ হওয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসব নবজাতককে বলা হয় সারোগেসি বেবি বা সারোগেট বেবি। সহমিলন ছাড়াও স্পার্ম ব্যাংকের মাধ্যমে সারোগেসি বেবি নিয়ে সিঙ্গল মাদার হওয়া যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিঙ্গল মাদার হওয়া বৈধতা থাকলে ও আমাদের দেশে সম্পূর্ণ অবৈধ।
স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে, বন্ধু বন্ধুকে অবলীলায় হত্যা করেই যাচ্ছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রএিকার পাতা খুললেই দেখা যায়,স্ত্রী স্বামীর লাশ ছয় টুকরা করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীকে সন্তানসহ হত্যা করছে। ছেলে বাবাকে টুকরো টুকরো করে বস্তাবন্দি করে ফেলে দিচ্ছে। এমনকি প্রেমের কারণে, অর্থ সম্পত্তির লোভে অনেক জঘন্যরকম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা, অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে তরুণদের আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পারায় ছেলেকে বিক্রি করে দিচ্ছে, পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে সন্তানকে খুন করছে বাবা-মা। স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করে যাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ, ভালোবাসা মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। এর পাশাপাশি সমাজে ধর্ষণ গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষ নিযার্তন ও থেমে নেই। পান থেকে চুন খসলে বড়ো গলায় বলতে শোনা যায়, কাবিনে টাকা জোগাড় করো। তুমি তালাক না দিলে আমি তোমাকে তালাক দিব। দুঃখে কষ্টে সম্নান বাঁচতে এক সময় চোখ অন্ধকার দেখে নীরবে আর্তহত্যার মতো পদ বেঁচে নেয়। যা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির। হত্যাকান্ড এখন’ বাংলাদেশে নিয়মিত ঘটনার একটি। রাজধানীতে এর মাত্রা একটু বেশি হলে ও গ্রামে ও থেমে নেই। যৌতুকের কারণে,পরকীয়ার কারণে প্রতি নিয়ত মৃত্যুর বলি হচ্ছে নারী-পুরুষ। বিয়ের পর একজন নারীর সবচেয়ে ভরসাস্থল ও নিরাপদ জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। টিক স্বামী ও কঠোর পরিশ্রম করে সকল বাধা-বিপত্তির উপেক্ষা করে যা সম্পদ অর্জন করে তা এনে দেয় স্ত্রী সন্তানের হাতে। পরকীয়া কারণে এক সময় স্বামীর সবকিছু নিয়ে চলে যায় অন্যের হাত ধরে। মা শব্দটি শুধু মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ নয়,শক্তির বন্ধনে আবদ্ধ সে মা,সন্তানদের হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য চলে যাচ্ছে। আজ এই মায়ার বন্ধন,অন্তর আর্তার সে বন্ধন কোথায় হারিয়ে গেছে। ভালোবাসা যেন সব অর্থবিত্তের হাতে আটক। সব ধরনের পারিবারিক ও সামাজিক কঠিন পরিবেশ থেকে বাঁচিয়ে রাখে স্বামী, যে স্ত্রীর সকল ভালোবাসা স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, একজন স্বামীকে ঘিরে,এক সময় সেই স্বামী-স্ত্রী হয়ে ওঠে লোভী, ভয়ঙ্কর, নির্যাতক, শোষক ও হন্তারক। ভেঙে যাচ্ছে যৌথপরিবার। শিশু-সন্তানরা বাবা-মাকে সময় মতো পাচ্ছে না। মা-বাবার স্নেহে থেকে বঋিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন। ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ। সামাজিক মূল্যবোধ,মানুষের প্রতি উদারতা, সুশৃঙ্খলা সৌজন্যবোধ,পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি হারিয়ে যাওয়ার কারণেই পরিবারের মাঝে অবক্ষয় দেখা দেয়। যা বর্তমান সমাজে অত্যান্ত ভয়ানক ও প্রকট আকার ধারণ করেছে । তাদের এই অধঃপতনের জন্য আমারাই দায়ী। আমারা তাদেরকে নিরাপদ ভবিষ্যৎ দিতে পারছি না,ভালোবাসা দিতে পারছি না।
আমরা অভিভাবকরা নিজেদেরকে সুপথে পরিচালিত করতে পারছি না। আজ আমরা ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখল হত্যা দেশের সর্বত্রই রয়েছে । এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হলে নৈতিক শিক্ষার প্রথম ও প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষ।
আজ কাল ধর্ষণ,খুন-গুম হত্যার মতো বিপজ্জনক অপরাধমূলক প্রবণতা দিন দিন সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমাজের এক শ্রেণির বর্বর পাষন্ড মানুষের হাতে অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও নিরাপদ নয়। আপনজনের হাতে তাদেরকে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে,এই কোমলমতি শিশুরা আজ কোনো দিক থেকেই নিরাপদ নয়। নানা কারণে তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। অপহরণ ধর্ষণ ও হত্যার নিষ্ঠুর শিকার হচ্ছে, কখনো রাস্তা ঘাটে আবার কখনো পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। এগুলো প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা।
পারিবারের সদস্যরা যদি মানবিক হয়, নৈতিক হয় তা হলে সন্তানরাও নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জন করে সামাজিক মূল্যবোধে গড়ে ওঠবে।
আমাদের দেশে বর্তমান সরকারের চৌকস নেতৃত্বে সাক্ষরতা হার বাড়লেও সুশিক্ষার হার বাড়েনি।
পরিবার থেকেই শিশুর নৈতিক ও মানবিক অবস্হান দৃঢ় করার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও শুধু একাডেমিক পড়াশোনার ওপরে জোর দেওয়া হয়। নৈতিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কাগজে-কলমে শিক্ষার চেয়ে হাতে-কলমে শিক্ষায় সামাজিক,অর্থনৈতিক অবস্হার পরিবর্তন আনত হবে। শিক্ষা বাস্তবতার সাথে মিল রেখে জীবনমুখী হতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে, জনসচেতনার সাথে ব্যক্তিসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্ম চর্চ্চা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্ম কখনোই ধর্মান্ধতা নির্দেশ করে না,শুধু ধর্মই পারে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে। সর্বক্ষেত্রে অশ্লীলতাকে বর্জন করতে একযোগে কাজ করতে হবে। অশ্লীলতাকে প্রতিরোধ করা প্রতিহত করা সবার দায়িত্ব। দায়িত্বে শুরুটা হতে হবে নিজ নিজ পরিবার থেকেই। রাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু বেশি দায়িত্ব নিতে হবে সমাজ ও পরিবার পরিজনদের।
আমাদের সন্তানকে অনেক সময় দিতে হবে, তাদের মনের অবস্থা বুঝতে হবে, নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে ।
আজ আমরা আমাদের ধর্মীয় এবং নৈতিকতার শিক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে পাশ্চাত্য কালচার অনুসরণ করে দেশকে নিয়ে যাচ্ছি অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে। এতে আমাদের সমাজে পরিবারে অশ্লীলতা,পাপাচার,হত্যা খুন-গুম, মাদকাসক্ত, অবৈধ সম্পর্ক, ব্যভিচার আমাদের সমাজের,পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে অবক্ষয়।
আমরা সব সময় অহংকার করে বলে থাকি
বাংলাদেশ এশিয়ার বাঘ। আমরা উন্নত সমৃদ্ধি,মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। অথচ এই দেশের সমাজ ব্যবস্হা পচে-গলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,সমাজ যে চরমভাবে অবক্ষয়গ্রস্ত হয়ে যুবসমাজের সৃজনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে এটা ব্যাপারে কারা মাথাব্যথা নেই। তরুন প্রজন্মেরা যদি সুস্থ ধারায় স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বিকাশিত না হয় তাহলে সামাজিক মূল্যবোধের সুরক্ষার বিকাশ না হয়, তাহলে দেশ,জাতি সমাজ,পরিবার আমরা অন্ধকারে তলিয়ে যাব।।
চলবে।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট