তীক্ষ্ণ চোখে স্বামী শাহরিয়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ইভা ! রাত সাড়ে এগারটা- ঘরের মেইন বাতির সুইচ নেভানো ! কারুকার্য করা ইজিপশিয়ান ল্যাম্প শেড থেকে একটা নরম,রহস্যময় অথচ আদুরে আলো সারা ঘরময় ছড়ানো ! সেই আলো আর মোবাইল ফোনের নীলচে আলো মিলেমিশে শাহরিয়ারের ফরসা মুখে পরেছে ! হালফ্যাশানের চাপ দাড়িতে কী যে সুন্দর লাগছে তাকে !! বিছানায় আধ শোয়া হয়ে কোনদিকে ভরূক্ষেপ না করে নিবিষ্ট মনে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে ! কি দেখছে এত মনোযোগ দিয়ে ?কোন মেয়ের ছবি ? কারও সাথে চ্যাটিং করছে ??? এত রাতে চ্যাটিং মানে -সম্পর্কটা বেশ গভীর !
ইভা ভিতরে ভিতরে ছটফট করলেও বাইরে শান্ত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ! ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ানোর ভান করছে আর স্বামীর মুখের প্রতিটি ভাঁজ পড়ার চেষ্টা করছে !
হঠাৎ দেখে শাহরিয়ার ভুরু কুঁচকে কি যেন টাইপ করছে ! মেয়েটা কি এমন কোন কথা লিখেছে যে শাহরিয়ার চিন্তিত ?! এবার আর নিজেকে সংযত করতে পারেনা ইভা ! ইরানী কার্পেটের উপর নি:শব্দে হেটে এসে আচমকা টান মেরে বিস্মিত শাহরিয়ারের হাত থেকে মোবাইল নিতে নিতে বলে, “কার সাথে চ্যাটিং করছো দেখি !!!”
একটি নামকরা বেসরকারি ব্যংকে উঁচ্চ পদে আসীন এমবিএ করা শাহরিয়ার ! ব্যংক থেকে আসা প্রতিদিনের রিপোর্ট গুলো রাতে মিলিয়ে দেখে সে ! আজ হিসেবে গরমিলের ঝামেলা হওয়ায় একটু বেশি সময় নিয়ে দেখছিলো !
মোবাইল ভালোমতো চেক করে আশ্বস্থ হয় ইভা ! গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে সে -শোবে এসো ! নিজের আচরনে খানিকটা লজ্জিত ! শাহরিয়ার মাথাটা আলতো ঝাঁকিয়ে এলোমেলো চুলে একবার হাত বুলিয়ে দিনের শেষ সিগারেটটা ধরানোর জন্য সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা নিয়ে বারানদায় এসে দাঁড়ায়!
ইভার সন্দেহ বাতিকের সাথে শাহরিয়ার বিয়ের নয় বছরে অভ্যস্ত না হলেও মোটামুটি পরিচিত ! অথচ প্রথম দিকে মোটেই এমন ছিলনা সে ! ক্লাসমেট ইভাকে অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি উদার মনের মানুষ মনে হয়েছে ! তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে ন্যাকা ন্যাকা টাইপ ঝগড়া করার মতো মেয়ে সে নয় ! শাহরিয়ার অত্যন্ত সুপুরুষ ও মার্জিত ! ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভারসিটির বহু সুন্দরী ধনীর দুলালীর হৃদয়ের কাঁপন আর রাতের ঘুম হারাম হবার কারন সে! অথচ তার প্রেম হলো ইভার সাথে ! ইভা দেখতে মাঝারি , উচ্চতায় মাঝারি,পড়াশোনায়ও মাঝারি শুধু মনটা ছিলো বিশাল ! বিয়ের প্রথম পাঁচ বছরেও তাই ছিলো ! কিন্তু যখন জানতে পারলো সনতানের মা হওয়ার ব্যাপারে জটিল সমস্যা আছে তার -তখন থেকে একটু একটু বদলে যেতে থাকলো ইভা ! চলনে, বলনে, আচরনে !
আগে শাহরিয়ারকে অফিসে ফোন করলে মিটিং এ থাকলে শাহরিয়ার “মিটিং এ আছি” বলে ফোনটা কেটে দিতো ! ফ্রি হয়ে পরে শাহরিয়ার নিজেই কল দিতো ; এর মাঝে কখনও বিরক্ত করতো না ইভা ! অথচ এখন কোন কারনে ফোন না ধরলে অথবা মিটিং এ আছি বলে কেটে দিলে ইভা অস্থির হয়ে ক্রমাগত কল দিতেই থাকে ! মাঝে মাঝে ভিডিও কল দিয়ে পুরো রুম ঘুরিয়ে দেখাতে হয় রুমে কে কে আছে ! এমনকি টয়লেটেও ক্যামেরা অন করে দেখাতে হয় সেখানে কেউ ঘাপটি মেরে আছে কি না! বহুবার এই নিয়ে অফিসের কলিগদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়েছে শাহরিয়ারকে ! একবার ফরেন ডেলিগেটসদের সাথে মিটিং এ থাকা অবস্থায় এক ঘন্টা কল না ধরার কারনে সশরীরে ব্যাংকে হাজির হয়েছিলো ইভা ! কনফারেন্স রুমের সামনে চিৎকার কান্নাকাটি- সেদিনের কথা ভাবলে আজও শাহরিয়ারের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায় !
(চলবে)