জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:
রমজানের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। সচেতন ক্রেতারা ভিড় এড়াতে, পছন্দ মতো পোশাক কেনার জন্য আগাম কেনাকাটায় ঝুঁকছেন। চন্দনাইশের মার্কেটগুলোও সেজেছে বর্ণিল সাজে।
ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারী, খানহাট, রওশনহাট, মৌলভী বাজার, বৈলতলীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০টি মার্কেট সেজেছে নতুন আঙ্গিকে। প্রতিটি শপিংমলে নিজেরা নিজেদের মতো করে আলোক সজ্জা ও রঙ্গিন কাপড় দিয়ে সাজিয়েছেন। হাল আমলের ফ্যাশনকে সামনে রেখে নতুন ডিজাইনের বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে তৈরি করেছে নতুন পোশাক। তাই ডিজাইনে এসেছে বৈচিত্র, বেড়েছে নিত্য নতুন কালেকশন। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে ব্যবসায়ীরা নতুন করে মূলধনের পাশাপাশি সাজসজ্জা যোগ করেছেন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দোহাজারী হাজারী টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোলাইমান বলেছেন, বছরজুড়ে আমাদের লক্ষ্য থাকে ঈদ, দুর্গাপুজা, পহেলা বৈশাখ, বৌদ্ধদের প্রবারণা পুর্ণিমা। এই উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে আমরা পরিকল্পনা সাজাই, বিনিয়োগ বাড়াই, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ উৎসবের সময় মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী জোরদার করা হয়। পাশাপাশি পুরো মার্কেটকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নজরদারিতে রাখা হয় ক্রেতাদের সুবিধার্তে।
গণি সুপার মার্কেটের প্রবীণ ব্যবসায়ী আবু তাহের চৌধুরী বলেছেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তাদের বাজেট মাথায় রেখে পোশাক এনেছেন ব্যবসায়ীরা। একটি দোকানে সারাবছর যা বিক্রি হয়, তার তিনগুণ ব্যবসা হয় ঈদের সময়। এ জন্য ঈদকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছেন চন্দনাইশের বিভিন্ন শপিংমলের ব্যবসায়ী। এবারে আবহাওয়াও বেশ ভালো, নয় গরম, নয় ঠান্ডা। ঈদের কেনাকাটার সময় এ পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চন্দনাইশের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের স্থান হচ্ছে দোহাজারী। এখানেই গড়ে উঠেছে হাজারী শপিং সেন্টার, খান প্লাজা, হাজারী টাওয়ার, দোহাজারী সিটি সেন্টার, শামসুদ্দিন সুপার মার্কেট, স্কুল মার্কেট, হাবিব প্লাজা। তাছাড়া খানহাটের গণি সুপার মার্কেট, ওয়ান আজিজ শপিং সেন্টার, রিভাইন প্লাজা, ছিদ্দিক বাছুরা শপিং কমপ্লেক্স, হাজী এনু মিয়া শপিং সেন্টার, বৈলতলী ইউনুচ মার্কেট, সিরাজ মার্কেট, বরকল মৌলভী বাজার, চন্দনাইশ সদর বাজার, রওশন হাট, বাদামতল আল শাকরা শপিং সেন্টার। এখন ঈদের পসরা সাজিয়ে এই শপিংমলগুলো সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদকে সামনে রেখে আকর্ষণীয় পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছেন বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। এ সকল শপিংমলগুলোতে দেশি-বিদেশি কাপড়ের মধ্যে পাকিস্তানী, ভারতীয় ও আফগানিস্তানের পোশাক তোলা হয়েছে। পাঞ্জাবিতে বিভিন্ন ধরনের নকশা, লেইস ও সিকুয়েন্সের কাজ করেছেন ডিজাইনাররা। থ্রি পিচের মধ্যে দিল্লীর বুটিক্স, ভারতীয় বিপুল, অর্গানজা, গঙ্গা, থানাবালা, দেওয়ান থ্রিব্যাগ, পাকিস্তানী জমজম, কাশ্মিরী, সুলতানসহ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে ক্রেতাদের আকর্ষণের চেষ্টায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি মেয়েদের কাতান, স্পট কাতান, জামদানী, অর্গানজা, বাবুর হাট টাঙ্গাইলের মনপুরি, জামদানী, সুতির শাড়ি পাকিজাসহ ছেলেদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি শোভা পাচ্ছে এ সকল শপিংমলে। এদিকে থান কাপড়ের দোকানে চলছে পাইকারী হারে বেচাকেনা। মধ্য ও নিন্মর্বিত্ত পরিবারের একটি অংশ থান কাপড় ক্রয় করে কম খরচে নিজের পছন্দের পোশাকটি তৈরি করার ভিড় জমাচ্ছেন টেইলার্সের দোকানগুলোতে। তাই টেইলার্সের দোকানের কর্মচারিদের ফুরসুরত ফেলার সময় পাচ্ছেন না।
উদ্যোক্তারা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের ম্যাটেরিয়াল আসে। যেমন– টাঙ্গাইলের তাঁতের কাপড়, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, রাজশাহীর মসলিন, সিলেটের মণিপুরি ও কুমিল্লার খাদি। গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন টাইপের কাপড়ের ওপর পোশাক ডিজাইন করেন তারা। অনেকে এবার ক্রেপ শাড়ি, ডিজাইনার থ্রি-পিচ, মসলিন শাড়ি, টুপিস, কুর্তি, অফিসওয়্যার এবং মেনস পাঞ্জাবি তুলেছেন। দেশে স্থবিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিকতা ফিরছে এবারের ঈদ বাজারে। মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনসহ নানা বাস্তবতায় নিয়মিত বেচাকেনা নেই বললে চলে। উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাঁরা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মহিলা ক্রেতারা সন্ধ্যার পরে মার্কেটে আসার জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ খুঁজছে। বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এর প্রভাব পড়বে এ ঈদ বাজারে।
অল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা তুলনামূলকভাবে কম মূল্যের থ্রি-পিস, পায়জামা-পাঞ্জাবি, ছোটদের পোশাক, প্রসাধনীর পসরা সাজিয়ে সড়কের পাশে নিজের মতো করে দোকান নিয়ে বসেছেন অনেকে। ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে মুল্য নির্ধারণ করে ব্যবসা করছেন চন্দনাইশের এ সকল ব্যবসায়ীরা। ধীরে ধীরে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। পরে বাড়তি ভিড় হতে পারে, এ কথা মাথায় রেখে অনেকে আগেভাগেই জামা-কাপড় কেনা সেরে রাখছেন। তবে কেউ কেউ এখন মার্কেটে আসছেন শুধুই পছন্দের পোশাক বাছাই করতে। এ পর্যায়ের ক্রেতারা বেশ কয়েকদিন বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে সবচেয়ে অভিনব পোশাকটিই কিনতে চাইবেন। তবে যাদের সামর্থ আছে, তারা ঠিকই আগেভাগে কেনাকাটা করছেন। আর এই সময়টাতে বড়দের পোশাকের দোকানগুলোতে তেমন ভিড় না থাকলেও ঈদের কেনাকাটায় ভিড় এখন ছোটদের পোশাক ও জুতার দোকানে।