শনিবার (৩১ আগষ্ট) দুপুর ২টায়, দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ প্রচার করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব এনামুল হক এনাম সহ জেলার নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সম্পুরক প্রশ্নের উত্তর দেন।
লিখিত বক্তব্যে আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান বলেন, সুপ্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম, আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে কষ্ট করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকায় আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে অভূতপূর্ব সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগতিতিক্ষার বিনিময়ে সেই সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছে। গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। অভূতপূর্ব এক জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ফ্যাসিবাদের অক্টোপাশ থেকে মুক্ত হয়েছে। হাজারো ছাত্র জনতার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
এখন যে বিষয়টি আপনাদের জানাতে চাই তা হলো, গতকাল শুক্রবার ৩০ আগস্ট ২০২৪ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় বিশেষ করে ডিবিসি নিউজ টিভি আমাদেরকে এবং এস আলম গ্রুম্নপকে নিয়ে একটি বিভ্রান্তিকর মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত সংবাদ প্রচার করেছে। যা দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করি, এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টি এর সম্মানিত পরিচালক ও চট্টগ্রামের বানিজ্যিক এলাকা চাক্তাই চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এই আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের রোষানলে পড়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার আসামি হয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। তিনি ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক জীবনে কোন ধরনের অন্যায় এবং অবৈধ কাজে কখনোই জড়িত ছিলেন না। কিন্তু একটি বিষয়কে সঠিকভাবে যাচাই না করে বিভিন্ন মিডিয়া ও ডিবিসি নিউজ টিভি কি কারণে উদ্দেশ্যমূলক এই মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি, আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত এবং সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন প্রচার করেছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
গতকাল প্রচারিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, গত বৃহস্পতিবার ২৯ আগষ্ট রাতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়ে এনামুল হক এনামের তত্বাবধানে এস আলম গ্রুপের বেশকিছু গাড়ী বাহির করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছেন, যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং সাজানো সংবাদ। আসল ঘটনা হলো, গত ২৯ আগষ্ট চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা প্রথমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপি’র নাম দিয়ে টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে এনামুল হক এনামকে অবহিত করেন। যদি চাঁদা না দেয়, তাহলে মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গুলোতে হামলা চালাবে বলেও হুমকি দেয়। তাই মীর গ্রুপের পক্ষ সহযোগিতা কামনা করেন। বিএনপি’র নাম দিয়ে ফোন করার ঘটনা অবহিত হওয়ার পর এনামুল হক দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে আমি আবু সুফিয়ানকে ঘটনার কথা জানান। তারপর আমরা কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি। উল্লেখ্য যে বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা সেইদিন দুপুর ১টা থেকে ৩টা এবং পরবর্তীতে বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে চাঁদা দিতে হবে বলে ০১৯৭৪৩৪৫৩২৪ নাম্বার মোবাইল ফোন থেকে বারবার হুমকি দিতে থাকে। বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট মত অবস্থান করে মীর গ্রুপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপি নাম দিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের চাঁদা দাবি করে, তাহলে তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ডিবিসি নিউজ টিভি প্রচার করেছেন আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেঁতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আমরা মনে করি, কয়েকটি গণমাধ্যম ও ডিবিসি নিউজ টিভি কতৃপক্ষ হয়তো কারো কূপ্ররোচনায় ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে উক্ত মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আমাদেরকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রচার করেছেন। যাহা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক বটে। উক্ত মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে সংবাদ প্রচারে সকল গণমাধ্যম ও ডিবিসি নিউজ টিভি সঠিক তথ্য নির্ভর সংবাদ প্রচারে সচেতন থাকবেন। সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খুবই প্রয়োজন। এখন সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যে কোনো অপপ্রচার ও অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা এতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদেরকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র পক্ষ হতে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অতীতের মতো আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম হোসাইনী, এস এম মামুন মিয়া, লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাড. ফৌজুল আমিন, খোরশেদ আলম, মফজল আহমদ চৌধুরী, নূরুল ইসলাম সওদাগর, ভিপি মোজাম্মেল (আনোয়ারা), মেজবা উদ্দিন চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ রফিক, হাজী মো: ইসহাক চৌধুরী, মঈনুল আলম ছোটন, শফিকুল ইসলাম শফিক, বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, রেজাউল করিম নেছার, মাষ্টার মোহাম্মদ লোকমান, রেজাউল করিম রেজা, গাজী আবু তাহের, মোর্শেদুল শফি হিরু, সাইফুদ্দিন আহমেদ তৌহিদুল আলম, আবদুল মাবুদ, শামশুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফিরোজ প্রমূখ।