চলছে দেশি ফলের ভরা মৌসুম। ইতোমধ্যেই বাজারে এসে গেছে নানা ধরনের দেশীয় ফল। আর যেসব ফল এই মুহূর্তে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে আম অন্যতম। আমকে বলা হয় ফলের রাজা। অনন্য স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও আম বেশ সমৃদ্ধ ফল। তবে আমের রয়েছে আবার অসংখ্য জাত। আর জাতভেদে আমের স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন হয়। এসব আমের নামকরণের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে মজার মজার ইতিহাস। দেশের বাজারে যেসব জাতের আম পাওয়া যায় তার মধ্যে হাঁড়িভাঙা বেশ জনপ্রিয়। এই জাতের আমের স্বাদও একেবারেই আলাদা। আঁশবিহীন হাঁড়িভাঙা আম অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই আমের আঁটিও খুব ছোট। বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে এই জাতের আমের চাষ সবচয়ে বেশি হয়। তবে শুরুতে এ আমের নাম হাঁড়িভাঙা ছিল না, মালদিয়া ছিল।
জানা গেছে, হাঁড়িভাঙা আমের যাত্রা শুরু হয়েছিল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তেকানী গ্রাম থেকে। হাঁড়িভাঙা আমের গোড়াপত্তন করেছিলেন নফল উদ্দিন পাইকার নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৪৯ সালের দিকে মিঠাপুকুরের উঁচা বালুয়া গ্রামটি ছিল ঝোপজঙ্গলে ভরপুর। সেই এলাকার জমি থেকে একটি আমের চারা নিয়ে এসে কলম করেন নফল উদ্দিন। তখন এর নাম ছিল মালদিয়া। আমগাছটিতে মাটির হাঁড়ি বেঁধে ফিল্টার বানিয়ে পানি দেওয়া হতো। একদিন রাতে কে বা কারা মাটির হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে। তবে গাছটিতে বিপুল পরিমাণ আম ধরে। সেগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু। বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে মানুষ ওই আম সম্পর্কে জানতে চায়। তখন নফল উদ্দিন মানুষকে বলেছিলেন, “যে গাছে লাগানো হাঁড়িটি মানুষ ভেঙে ফেলেছে, সেই হাঁড়িভাঙা গাছের আম এগুলো।” তখন থেকেই ওই গাছটির আম “হাঁড়িভাঙা” নামে পরিচিতি পায়।
সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় সেই মাতৃগাছ থেকে জোড়া কলম করার হিড়িক পড়ে যায়। এলাকার মানুষ জোড়া কলম নিয়ে লাগাতে থাকেন। গড়ে উঠতে থাকে বাগান। এরপর আশির দশকে বাণিজ্যিকভাবে গাছের কলম করে হাঁড়িভাঙা আমবাগান গড়ে ওঠে।
(ছবি : সংগৃহীত)