জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী,চন্দনাইশ প্রতিনিধি:-
মুসলিম বিশ্বের পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদ মাত্র আর কয়েকদিন বাঁকি। ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে চন্দনাইশে ও পশুর হাট। সপ্তাহের দু-দিন মঙ্গলবার ও শুক্রবার ছাড়াও ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই বসবে হাট। বেচা-কেনা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগে থেকেই। বিক্রেতারা বলছেন,গতবছরের তুলনায় ভালো দামে গরু-মহিষ বিক্রি করছেন তারা। বড় গরুর তুলনায় ৩ থেকে ৫ মণ ওজনের মাঝারি গরু চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।
২৭ জুন (মঙ্গলবার) হাটে দেখা গেছে গরু-মহিষের সরবরাহ বেশ ভালো। দূর-দূরান্তের পাইকাররা এসেছেন কুরবানির পশু কিনতে। তবে বড় গরুর বেচা-কেনা কম হতে দেখা গেছে। মাঝারি ও কুরবানিযোগ্য ছোট গরুর চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশি। আমদানি বেশি হওয়ার সাথে সাথে দামের ক্ষেত্রে প্রতি গরুতে গতবারের তুলনায় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়,হাটে পশুর সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মত। বিক্রেতারা পশু নিয়ে অপেক্ষা করছেন। উত্তপ্ত রোদে দরদর ঘামছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। চলছে দামাদামি দামে হলেই ছাড়ঘরের দিকে ছুটছেন তারা। আনুমানিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ ওজনের ষাঁড় গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এই হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন ধোপাছড়ির একজনকে গরুর দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি বাড়ি গরু কিনে এনে হাটে বিক্রি করেন। ঈদের হাট জমজমাট থাকে আর প্রতিটা গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। লাল রঙের এক ষাঁড় গরুর আনুমানিক ওজন হবে জানালেন ৩ মণ ১০ সের। দাম হাঁকলেন ৯০ হাজার।
দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নে আকতার উদ্দিন বলেন,কুরবানির সময় বাইরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাটে আসেন। পছন্দের গরু দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। ওজনের তুলনায় গরুর দাম সমসময় হয় না। পছন্দের উপর দু-পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনেন ক্রেতারা।
সাতবাড়িয়া এক ক্রেতা গরু কিনতে এসেছেন হাটে। হাটের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন,আর ১ থেকে ২ দিন জমজমাট হবে হাট। বিশেষ করে কুরবানির ৩ থেকে ৪ দিন আগে থেকে হাটে গরু কিনতে আসেন গেরস্ত পার্টিরা। কুরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনে বাড়িতে কয়েকদিন যত্ন করেন। স্থানীয় গেরস্ত মানুষেরা কিছু কিছু হাটে আসছেন। এখন পাইকার আছে হাটে।
পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আসা ক্রেতা মো.আজম জানান,ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তারা কুরবানির পশু কিনে থাকেন। প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার গরু কিনেন। এবার হাটে পছন্দসই ভালো পশু আছে। দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি গরু দেখেছেন। দামের তুলনায় একটু চড়া মনে হলেও সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা তেমন মনে করবেন না বলেই ধারণা করছেন তিনি।
গরুর খামারিরা জানান,গতবারের চেয়ে এইবার গরু প্রতি দাম বেশি আছে। গরুর উৎপাদন খরচ বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি গরুর দাম। তিনি বলেন,গরুর খাদ্য কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে।
ঈদের আগে সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও পশুর আমদানি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে গরু কিনছেন। বাইরের ক্রেতারাও গরু-মহিষ কিনছেন।
চন্দনাইশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রূপেন চাকমা বলেন,চন্দনাইশে কুরবানির জন্য পশুর চাহিদা অনুমানিক ৪০ হাজার ৩৭০টি, গবাদি পশু উৎপাদন ৪৩ হাজার ৪’শ ৮১টি। খামারি সংখ্যা ছোট বড় হিসেবে ২৫০টি। ষাড়,বলদ,গাভী, মহিষ মোট ২৯হাজার ৯’শ ৮৪টি। ছাগল,ভেড়া মোট ১৩ হাজার ৪’শ ৯৭টি। বাজার স্হায়ী ২টি বাগিচা হাট,কালী হাট,অস্হায়ী ১১টি পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই খামারিরা ভালো দাম পাবেন। এইবার কুরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। নিজেদের পশু দিয়েই দেশে কুরবানির পশুর চাহিদা মিটাতে পারবে। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু আছে। আর হাটে কোন ক্রেতা-বিক্রেতা অসুস্থ হলে তাদের জন্য একজন চিকিৎসক আছে গরুর জন্য ভেটেনারি ডাক্তার থাকবে বলে তিনি জানান।