1. info@www.dainikdeshbarta.com : bissho sangbad Online : bissho sangbad Online
  2. info@www.dainikdeshbarta.com : Dainik Desh Barta :
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
চন্দনাইশে পূর্ব জোয়ারায় ২০ দিনব্যাপী ভিক্ষু পরিবাসব্রত নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগে সুযোগ না দেওয়ায় মানববন্ধন করলো রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এর শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. দেলোয়ার হোসেনের ইন্তেকাল জমকালো আয়োজনে দোহাজারী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করলেন জাতীয় মহিলা ফুটবলর ঋতুপর্ণা চাকমা চট্টগ্রামে অসহায়দের মাঝে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এর শীতবস্ত্র বিতরণ বোয়ালখালীতে পিক-আপ মোটর সাইকেল সংঘর্ষে  দুই মোটরসাইকেল আরোহী আহত বোয়ালখালীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইল্ল্যার অউন ফোয়ানি উৎসব চন্দনাইশ বরকলে জামায়াতে ইসলামীর শীতবস্ত্র বিতরণ এপেক্স ক্লাব অব পটিয়ার উদ্যোগে শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। ইক্বরা মডেল মাদ্রাসায় সবক নিয়েছে শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশের প্রথম নারী চিকিৎসক হিসেবে হিমালয়ের ৬,১৬৫ মিটার উচ্চতার পর্বত – আইল্যান্ড পিক আরোহনের রেকর্ড করলেন ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা।

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪
  • ২৯২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের প্রথম নারী চিকিৎসক হিসেবে হিমালয়ের ৬,১৬৫ মিটার উচ্চতার পর্বত – আইল্যান্ড পিক আরোহনের রেকর্ড করলেন ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা।

ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা – বর্তমানে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এ সার্জিকাল অনকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য প্রশিক্ষণ করছেন । তিনি ৩৯ বিসিএস এর একজন কর্মকর্তা ।

ছোট বেলা থেকেই দুরন্ত কানেতা লেখাপড়া করেছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল ও ঢাকা সিটি কলেজ এ । পড়াশোনাতে বরাবরই ভালো রেজাল্ট এর পাশাপাশি কো- কারিকুলার একটিভিটিতেও সমান পারদর্শী ছিলেন । শিশু একাডেমি থেকে ছবি আঁকা, আবৃত্তি , অভিনয় – বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পেয়েছেন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার । বাংলাদেশ টেলিভিশন এ ‘ ছোটদের খবর ‘ এ সংবাদ পাঠিকা ছিলেন । ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী । বাবার স্বপ্ন পূরণে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস শেষ করেন ২০১৩ সালে ।

২০১৪ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ডা মো সাইফুল ইসলামের সাথে । ২০১৮ সালে হন দুই যমজ সন্তানের জনক – জননী । দুজনই খুব ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন । দেশে বিদেশে পাহাড় সমুদ্র ঘুরে বেড়িয়েছেন । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রতিও তাদের বিরাট ঝোঁক । চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তারা দুজনই ফিটনেস সচেতনতার জন্য রানিং এবং যোগ ব্যায়াম করেন নিয়মিত ।

২০১৬ সালে সার্জিক্যাল অনকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি এর জন্য পড়াশোনা শুরু হয় কানেতার। ২০২০ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে সরাসরি চলে যান করোনা ইউনিট এ । দেশের ক্রান্তিলগ্নে নিজের ছোট দুই সন্তান ও পরিবার পরিজন ছেড়ে সেবা দিয়ে গেছেন – মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ তে । প্রায় দুই বছর কাজ করেছেন । নিজে করনাতে আক্রান্ত হয়েছেন তিনবার । তবুও পিছপা হননি । বাবার আদর্শ ও পরিবারের সবার সহযোগিতায় জয় করেছেন এই যুদ্ধ । পরবর্তীতে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ মেডিকেল অফিসার ডিজিজ কন্ট্রোল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে । নরমাল ডেলিভারি তে মায়েদের আগ্রহী করতে নিজ উদ্যোগে উঠান বৈঠক ও সঞ্চয়ী মাটির ব্যাংক উপহার দিয়েছেন ।
জড়িত আছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে । মেডিকেল ও ডেন্টাল স্টুডেন্টদের সংগঠন – মেডিসিন ক্লাবের আজীবন সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী উপদেষ্টা তিনি । সামাজিক সংগঠন – ওয়ান বাংলাদেশের প্রাক্তন নারী বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক । দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন – বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইনডিয়া -এর সপ্তম আসরে ২০১৯ সালে ।
২০২১ সালে রানিং জগতে প্রবেশ ডা কানেতার । স্বামী সহ তার পরিবারের আরও সদস্য রানিং করেন । দেশের মধ্যে বিভিন্ন রানিং ইভেন্ট এ নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন তারা।এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তারা সফলভাবে রান করেছেন – পৃথিবীর উচ্চতম রানিং ইভেন্ট – লাদাখ ম্যারাথন এ । সেখানে ২১.১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন ক্যাটাগরি তে ১১ হাজার ফুটের অধিক উচ্চতায় রান করেছেন।

হিমালয়ের এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গ দুজনের কাছেই এক স্বপ্নের মতন । তাদের এই স্বপ্নে রঙ মাখাতে এগিয়ে আসেন – ROPE 4 OUTDOOR EDUCATION. পর্বতআরোহণকে সহজ করে সাজিয়ে দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিষ্ঠানটি ।
গত ১৩ অক্টোবর,২০২৩ – সকাল ১০:৩০ মিনিটে তারা নেপালের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করে কাঠমন্ডু পৌঁছান । সেখান থেকে পরদিন পৌঁছান রামেচাপ । এখন থেকে ছোট বিমানযোগে পৌঁছান পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং বিপদজনক এয়ারপোর্ট – লুক্লা তে । লুক্লা থেকে শুরু হয় ট্রেকিং । স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্ক এর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেন তারা । সাথে ছিলেন – বাংলাদেশী আরও ৫ জন তরুণ । পুরো টিমের মধ্যে মাত্র ২ জনের আগে হিমালয়ের পরিবেশের সাথে পরিচয় ছিল । বাকি সবার জন্যই এ পথ ছিলো নতুন । তবুও সবাই মিলে এগিয়ে চলেছেন । উঠা- নামা আকাবাকা পথ , সাথে তীব্র ঠাণ্ডায় তুষারপাত , অতি উচ্চতা জনিত শারীরিক সমস্যা – সব কিছু ছাপিয়ে তারা ট্রেকিং করেছেন প্রতিদিন প্রায় ৮-১২ ঘণ্টা।

অবশেষে-গত ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ইং তারিখ সকাল ১০:২০ মিনিটে তারা হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত “আইল্যান্ড পিক বা ইমজাৎসে” পর্বত সফলভাবে আরোহন করেন, যার উচ্চতা ৬,১৬৫ মিটার (২০,২২৬ ফুট)।
এর পূর্বে ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ইং তারা ৫,০৭৩ মিটার উচ্চতার নাগার্জুন পর্বত আরোহন করেন।
বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্ট এর বেস ক্যাম্পে অভিযান করে ২২ অক্টোবর, ২০২৩ইং তারিখে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প (৫,৩৬৪ মিটার) পৌঁছান।২৩ অক্টোবর, ২০২৩ইং তারিখ তারা হিমালয়ের আরেকটি পর্বত, কালা পাত্থার এর শিখর স্পর্শ করেন যার উচ্চতা ৫,৬৩৯ মিটার।২৬ অক্টোবর, ২০২৩ইং তারিখ রাত ১:২০ মিনিটে তারা আইল্যান্ড পিক বেসক্যাম্পে থেকে সামিট পুশ করেন। রওনা হওয়ার সময় টেম্পারেচার ছিল মাইনাস ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যেই তারা সামিট ক্লাইম্ব শুরু করেন।

আইল্যান্ড পিক, এর বেসক্যাম্প থেকে শিখর পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ মিটার একেবারে খাড়া হয়ে উঠে গেছে।
তিনটি ধাপের প্রথম ধাপ- রক ফেস। যেখানে তাদের বেশ কয়েকটা স্থানে চার হাত পা ব্যবহার করে ক্লাইম্ব করতে হয়েছে।দ্বিতীয় ধাপ- ক্রম্পন পয়েন্ট থেকে ফিক্সড রোপ পর্যন্ত যাওয়ার পথ। বরফের রাজ্য গ্লেসিয়ার, যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল বরফের ফাটল।শেষ এবং তিন নাম্বার ধাপ- ফিক্সড রোপ ক্লাইম্বিং। প্রায় ৯০ ডিগ্রি খাড়া বরফের দেয়াল উঠে গেছে আইল্যান্ড পিক এর শোল্ডার পর্যন্ত। ফিক্সড রোপ জুমার ক্লাইম্ব করতে করতে শোল্ডারে উঠেন তারা এবং শোল্ডার ধরে কিছুটা উপরে উঠে ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ইং তারিখ সকাল ১০:২০ মিনিটে আসে তাদের চূড়ান্ত সফলতা। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের সাথে অবসান হয় অপেক্ষার -প্রথমবারের মত বাংলাদেশের ৫ জন তরুণ তরুণী একসাথে আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার/২০২২৬ ফুট) এর শিখর স্পর্শ করেন । ডা সাইফুল ও ডা কানেতার সাথের অন্য সাথীরা হলেন – তানজিনা রহমান , আবরারুল আমিন অর্ণব , রণজিৎ চৌধুরী । বেইস ক্যাম্প ম্যানেজার ছিলেন – আরেক তুখোড় পর্বতারোহী আহসানুজ্জামান তৌকির । দেশে থেকে ও সার্বিক দিক নির্দেশনায় ছিলেন – রোপ ৪ এর প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন মাহি এবং মারুফা হক।

এভাবেই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে গড়ে ওঠে একটি অনন্য রেকর্ড। হিমালয়ের আইল্যান্ড পিকে ওড়ে বাংলাদেশের লাল – সবুজ পতাকা । বাংলাদেশের প্রথম যুগল হিসেবে এবং নিজেদের প্রথম হিমালয় অভিযানেই ৬০০০+ মিটার পর্বতের শিখর স্পর্শ করেন এই চিকিৎসক দম্পতি ।

এখানেই শেষ নয়, নিজের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিজয়ের ৫৩ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে ৫৩ কিলোমিটার পথ দৌড়ে পাড়ি দিয়েছেন ডা কানেতা । ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িত গাজীপুরের জাগ্রত চৌরঙ্গী থেকে দৌড় শুরু করে যান সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে । সেখান থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে শ্যামলী দিয়ে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনীতে শেষ হয় । তার সাথে উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আরো কয়েকজন ।

পেশাগত জীবনে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করে ডা কানেতা অনেকের জন্যই স্থাপন করেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত । ভবিষ্যতে হিমালয়ের অন্যান্য পর্বতের চূড়ায় ও মেলে ধরতে চান নিজের দেশের পতাকা । যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছুতে চান পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া – মাউন্ট এভারেস্ট ।পাশাপাশি নারীদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান । দেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন করতে চান ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট