বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালী ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধু, বাঙালী ও বাংলা ভাষা একই সুত্রে গাথা। বাঙালির ইতিহাসে তার অবদান অনন্য।বঙ্গবন্ধু মানে বাঙালী আর বাংলা ভাষা মানে বাঙালী। বাঙালী শিরা উপশিরায় তার নাম জড়িয়ে আছে। তার অঙুলীর ইশারায় দেশ আজ স্বাধীন। তিনি অজ পাড়া গায়ের ছেলে হয়েও আমাদের জাতির সম্পদ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।তার কথা কাজে প্রমাণ মিলেছে। তিনিই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী।
বাঙালী ইতিহাসে অনেক বিপ্লবী বীর জন্মগ্রহণ করলেও কেউ স্বাধীনতা স্বাদ দিতে পারেনি। বীর চট্রলার বীর মাষ্টার দা সূর্য সেন,বীর প্রীতি লতার ওয়েদ্দার,বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নায়ক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সহ অনেক বীর সেনানিরা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব ও জীবন দিয়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা আসেনি। বাংলার বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক,মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্বাধীনতার জন্য আপ্রাণ লড়াই সংগ্রাম করেও স্বাধীনতা আনতে পারেনি।বাঙালির রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন দেশ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ নামক দেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
বাঙালির স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রায় ৪৬৮২ দিন পাকিস্তানি কারাগারে প্রকোষ্ঠে ছিল আর জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এই বাঙালীকে
তিনি এক অভিন্নতা সৃষ্টির মাধ্যমে এক সুত্রে গাথা করেছিল।তার বৃদ্ধ আঙ্গুলীর ইশারায় লক্ষ লক্ষ লোক জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল বলে তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। তিনি যেদিকে যেত লোক আর লোক।১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ভাষনে কত লক্ষ লোক জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল তা সহজে বুঝা যায়। তার প্রতি মানুষের ভালবাসা আর বিশ্বাস ছিল বলে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। তার ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব সম্পর্কে বৃটিশ লেখক সিনেক বলেন -ledership is not about the next election. It’s about the next generation. বঙ্গবন্ধু আক্ষরিক অর্থেই সারা বিশ্বের নেতা ছিলেন। বিশ্বের সব নেতারা তাকে সমীহ করত।
বিশ্ব নেতা ফিদেল কাষ্ট বলেন –
আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু আমি মুজিবকে দেখেছি।
ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে একটি যুদ্ধবিধবস্ত দেশকে কিভাবে সোনার বাংলা দেশ করা যায় তিনি তা উপলব্ধি করেন। সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার বাংলা তৈরি করতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করে যান।বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে কতটুকু ভালবাসে তা তার ভাষণে পাওয়া যায়। আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত করে তাকে গ্রেফতার করে যখন ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ওরা আমাকে ফাসি দেবে।তখন এক টুকরো মাটি তুলে নিয়ে কপাল মুছে বলেছিল হে মাটি, আমি তোমাকে ভালবাসি।আমাকে যদি ওরা ফাসি দেয়,মৃত্যুর পরে আমি যেন তোমার কোলে চিরনিদ্রায় শায়িত থাকতে পারি।। বক্তৃতার শেষে তিনি বলেছিলেন, রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে তোমরা যারা আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছ,যদি কোন দিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের রণ শোধ করে যাব।তিনিই একাই রক্ত দেননি স্বপরিবার রক্তের রণ শোধ করে গেছেন। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে সঠিক হয়েছে। আর বাঙালীর জন্য রেখে যান তার দু’কন্যা।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন সোনার বাংলা গঠনের জন্য তিনি যুদ্ধবিধবস্ত দেশকে কিভাবে সোনার বাংলা করা যায় তা চিন্তা করতেন।এদেশে রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি ঢুকছে তা তিনি উপলব্ধি করেন। তার ভাষনে আমরা সহজে বুঝতে পারি তিনি ঘুষকোর আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ছিল।নীতির প্রশ্নে কখনো আপোষ করেনি।
এই বাঙালীকে ক্ষুধা আর দ্রারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ লড়াই সংগ্রাম করে যান।
বঙ্গবন্ধু সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুর্নগঠন,সংবিধান প্রণয়ন,১ কোটি মানুষের পুর্ণবাসন,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত বিনামুল্যে ও মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত নামমাত্র পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ,মদ,জুয়া,
ঘোড়াদৌড়সহ সমস্থ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ, ইসলামীক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা,মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুর্নগঠন,১১০০০ প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ ৪০০০০ প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ,মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর হাতে ধর্ষিতা মেয়েদের পুর্ণবাসনের মাধ্যমে নারী পুর্ণবাসন সংস্থা,
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন, ২৫ বিঘার খাজনা মাফ,বিনামূল্যে কৃষকদের কৃষি উপকরণ বিতরণ,পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক,বীমা ও ৫৮০ টি শিল্প ইউনিটের জাতীয়করণ ও চালু করার মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মসংস্থান,ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বন্ধ শিল্প কারখানা চালুকরণ সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করে দেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস নিয়ে সোনার বাংলা গঠনে কাজ যান।অতি অল্প সময়ে বাঙালী জাতির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য।অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করা ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরাট সাফল্য।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের জন্য সবকিছু করেছে যা তার প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখতে পাই। তার অর্থনৈতিক প্রবদ্ধির হার ছিল ৭ এর উপরে যা ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধু,বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা এক সুত্রে গাথা।নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের দাবী আদায়ের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দেন।তিমি বলেছিলেন – আমি আমার দেশের মানুষকে বেশী ভালবাসি।তাদের জন্য আমি নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত। এই স্বাধীনতা একমাত্র তাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।স্বাধীন দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তিনি দেশ গঠনের দিকে মনোনিবেশ করেন।আজীবন সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করেছেন।তিনি পুরো জাতিকে একত্রিত করে স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত করে স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণটি বাস্তবায়ন করেন।জাতির পিতার কল্যাণে আমরা আজ স্বাধীন জাতি।
তিনি হলেন বাঙালী জাতির মুক্তির দিশারি, অবিসংবাদিত নেতা তথা জাতির পিতা। শুধু বাঙালী নয় সারা বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠ মহান নেতা ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন,আবার তা বাস্তবায়ন করতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।তিনি ক্ষুধা ও দ্রারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে কিছু কাজ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরে ছিলেন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে সোনার মানুষ চাই। সেজন্য তিনি প্রতিটি সেক্টরে নিজের মত সাজাতে হাত দেন। সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ হাতে নিয়ে অগ্রসর হতে চাইলে তিনি দেখতে পান দুর্নীতি হল তার বাধা।দেশের উন্নয়ন করতে হলে দক্ষ জনশক্তি ও পরিকল্পনা প্রয়োজনতা রয়েছে। সেজন্য দুর্নীতিকে টার্গেট করেন।সেই সময় তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ভুমিকা রাখেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি বলেন – একটা কথা মনে রাখতে হবে, আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে।ওই চোর,ব্লাক মার্কেটিয়ান,ওই ঘুষখোর।
আরেক জায়গায় তিনি বলেন -ভয় নাই,কেনো ভয় নাই। আমি আছি।দুর্নীতিবাজদের খতম করো,বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন করো।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন নেতা।অসহায় ও দুঃখী মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের জন্য তিনি আপোষহীন ভাবে লড়াই সংগ্রাম করে যান।তিনি জানতেন বাংলাদেশকে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি,
সমাজনীতি ও উদ্ভাবনের বিকল্প নাই।তার লেখা – আমরা দেখা নয়া চীন বইয়ের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, বৈষম্য, সামাজিক নানা অনুসঙ্গ,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মানবিক যোগাযোগ, বিশ্ব বাস্তবতা, শান্তিবাদ এবং নয়া চীনের রহস্য উদঘাটন করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থা ও তুলনা করেছেন।
তিনি লিখেছিলেন -চীন সংস্কার উন্নতি করেছে মাথাভারী ব্যবস্থার ভিতর দিয়া নয়,সাধারণ কর্মীদের দিয়া,শ্রমিকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল আছে,অসুস্থতার সময় বেতনসহ ছুটি দেওয়া হয়।বছরে তারা এক বার ছুটি পায়,যারা বাড়িতে যেতে চাই তাদের বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়,আর যারা স্বাস্থ্য নিবাসে যেতে চায় তাদেরও ব্যবস্থা করা হয়।বঙ্গবন্ধু আরও লিখেছেন আমাদের দেশে যখন পাট চাষির ঘরে থাকে, তখন দাম অল্প হয়।যখন মহাজনদের ঘরে থাকে দাম বাড়তে থাকে। চাষি ও উৎপাদন খরচও পায় না।- কিন্তু নয়াচীন একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান করেছে,কৃষক বিক্রি করে তার দাম দিয়ে ভালোভাবে অল্প দামে তেল,নুন ও কাপড় কিনতে পারে।
বাংলাদেশকে সত্যিকারের প্রকৃত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। কিন্তু তার স্বপ্ন শেষ করে দেয় কিছু স্বার্থন্বেষী লোক।তারা দেশী-বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ঘৃণ্য পথে গিয়ে বাঙালী জাতির হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান,শেষ ঠিকানা, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট রাতের অন্ধকারে হত্যা করে। এমনকি তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব,ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, অবুঝ শিশু ছোট্ট রাসেলকে সহ পুরো পরিবারের সবাইকে হত্যা করে যা ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ।পৃথিবীর কোথাও এমন নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।বঙ্গবন্ধুর হত্যা মানে বাঙালী জাতির স্বপ্নকে হত্যা করে।পুরো জাতির উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে।বাংলাদেশের সবকিছু শেষ করে দেয় যা বলাবাহুল্য। সেদিন পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে যায়।আকাশ বাতাস নিশঃস্বব্দ ছিল।সোনার বাংলা স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
আদর্শের উত্তরসূরী সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালী জাতির জন্য তিনিই হাজার হাজার নেতা রেখ ও কোটি কোটি কর্মী রেখে যান । যারা আজকের দিনে
বাঙালীর সম্পদ হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রিয় বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নয়ন রোল মডেল বাংলাদেশ বলতে দ্ধিধা করছেনা।সবাই অবাক তাকিয়ে আছে এই ছোট দেশটির দিকে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজ উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তর হয়েছে যা ইতিহাস। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার ক্যারিসমেটিক নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরন হয়েছে।বঙ্গবন্ধু ছিল আদর্শিক রাজনীতির কারিগর। তার আদর্শ চির উন্নত মম শির হয়ে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।বঙ্গবন্ধুর আত্ত্বার শান্তি পাবে, তার স্বাধীনতা সার্থক হয়েছে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার রাতদিন নিজেকে উজাড় করে কাজ করেছেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
লেখক – তসলিম উদ্দীন রানা
সদস্য,অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট।।