পার্বত্য রাঙামাটির ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত শান্তিনগর (বাস টার্মিনাল) এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ফল উৎসবের আয়োজন করেছে জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। ২৫ জুন রবিবার স্বপ্নযাত্রী বিদ্যাপীঠ – ১ এর অর্ধশতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে এই আয়োজন করে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “জীবন”। এসময় একসঙ্গে বাহারি রঙ আর বিচিত্র স্বাদের অসংখ্য মৌসুমী ফল সামনে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে কোমলমতি শিশুরা।
রবিবার (২৫ জুন) রাঙামাটি শহরের শান্তিনগর এলাকায় স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত “স্বপ্নযাত্রী বিদ্যাপীঠ – ১” এ এই ফল উৎসবে অর্ধশতাধিক শিশুকে বাহারি মৌসুমী ফল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে।
সকালে বিদ্যালয়ের আশেপাশে জড়ো হয়ে শিশুরা মনের সুখে সম্মিলিত কণ্ঠে ছড়াগান গেয়ে উৎসবের আমেজে বাড়তি প্রাণসঞ্চার করে। কচি-কাঁচার মেলায় পরিণত হয় শান্তিনগর এলাকা। সবার কণ্ঠে একই সুর। শিশুদের সামনে সাজানো হরেক রকমের মৌসুমী ফল। ইতোপূর্বে এভাবে আয়োজন করে একসঙ্গে এতো ফল কখনো খাওয়া হয়নি ওদের। কিছু ফল তাদের কাছে একদমই অপরিচিত। বাস টার্মিনাল এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান এরা। এসব বাহারি ফলের স্বাদ গ্রহণ তাদের কাছে অনেকটাই স্বপ্ন। মাঝেমধ্যে সুযোগ হলেও একসাথে হরেকরকম ফলের সমাহার এটাই প্রথম। হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে সন্তানদের মুখে সবসময় এই ফলগুলো তুলে দেয়া সম্ভব হয়না বিধায় জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, কাউ, জামরুল, আনারস, লটকনসহ হরেকরকম মৌসুমী ফলের স্বাদ পেয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এসব ফল সামনে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ফল উৎসবে উপস্থিত এসব শিশুরা। অনেকেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সামিল করেছে এই বাহারি আয়োজনে।
ফল উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অপরাজিতার সভাপতি সাইদা জান্নাত, স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন রাঙামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক প্রমিতা চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার সাজিদ-বিন-জাহিদ (মিকি)। বক্তব্য রাখেন স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম আরজু।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আয়োজিত এই ফল উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথিরা জানান, “বর্তমান সময়ে আমাদের অধিকাংশ শিশুই আমাদের দেশীয় ফলের সঙ্গে পরিচিত নয়। বিদেশী ফলের প্রতি আমাদের এতো বেশী ঝোঁক যে আমরা আমাদের পুষ্টি চাহিদা পুরণের জন্য দেশী ফলের প্রতি আস্থা রাখতে দ্বিধান্বিত হই। অথচ অনেক স্বল্পমূল্যে এসব ফল আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখলে অপুষ্টিজনিত অনেক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।”
অন্যদিকে উদ্যেক্তারা জানান, হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠার কারনে একসঙ্গে এতো ফল খাওয়ার সামর্থ্য নেই এইসব শিশুদের। এমন শিশুদের দেশীয় ফলের স্বাদ এবং এর সঙ্গে পরিচিত করতেই তাদের এমন প্রয়াস।
জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাজিদ-বিন-জাহিদ (মিকি) বলেন, “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আমরা এসডিজি – ৩ সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, এসডিজি – ৪ মানসম্মত শিক্ষা এবং এসডিজি – ১০ অসমতা হ্রাস এই তিনটি লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দিয়ে আজকের আয়োজনটি সাজিয়েছি। আমরা যেমনিভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পুষ্টি চাহিদার বিষয়টি মাথায় রাখছি সেইসাথে তাদের আমাদের দেশীয় ফলগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। সাধারণভাবে ফল খাওয়া নিয়ে যে বিষয়টি মূল বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তা হলো – ভ্রান্ত ধারনা। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, দামী ফল খেলে তবেই পুষ্টি চাহিদা পূর্ণ হবে। আমরা এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে শিশু কিশোরদের শিক্ষিত করছি যা মূলত অসমতা হ্রাস করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন এর স্বেচ্ছাসেবীরা সামনের দিনগুলোতেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।