নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রতারণার মামলায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার জসিম উদ্দীন সিআইপি’র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বলে জানান মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী এমজাদ হোসেন।
প্রতারনা মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামী জসিম উদ্দিন সিআইপি বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব চরণদ্বীপ ইউনিয়নের খলিল তালুকদার বাড়ির মো. জেবল হোসেনের ছেলে।
মো. জসিম উদ্দীন সিআইপি (৪৭) সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মো. ইলিয়াছ বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। পরে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়।
আসামীরা হলো, মো. জসিম উদ্দিন (৪৭), মোছাম্মৎ রুমা আকতার (৩৯), কমল সাইর প্রকাশ কমল শের (৭৬), রোকেয়া বেগম (৮২), মরিয়ম বেগম (৬১), মোহাম্মদ ইদ্রিস (৬২), মোহাম্মদ ইসমাইল (৬৩), মোহাম্মদ এয়াকুব (৫০), মোহাম্মদ ইউনুছ (৬০), মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৫২), মোহাম্মদ এনাম (৪৬), খুরশিদা বেগম (৫০), মোছাম্মৎ মুরশিদা বেগম (৪৪), মো. হারুনুর রশিদ (৫৩), মোঃ ফারুক (৪৩), মো. তারেকুল ইসলাম (২৯), আনজুমান আরা বেগম (৪৫), শামীম আকতার (৪১), মনোয়ারা বেগম (৩৭), আজিজুল হক প্রঃ এজাজুল হক (৪০), মোহাম্মদ এমদাদুল হক (৩৮), মো. জাহিদুল হক (৩৫), শামীমা আক্তার (৩৫) ও মোছাম্মৎ রোকসানা বেগম (৩৮)।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, জসিম উদ্দীন সিআইপি ও মো. ইলিয়াছ একই এলাকার বাসিন্দা এবং দুইজনই বিদেশে যৌথভাবে ব্যবসা করত। সেখান থেকে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কের ফলে মামলার বিবাদী জসিম উদ্দীন ইলিয়াছকে আনোয়ারা উপজেলায় একটি জায়গা ক্রয় করার প্রস্তাব দেন। ইলিয়াছ জসিমের কথায় ইলিয়াছসহ আরো ৫ জন যৌথভাবে জায়গাটি ক্রয় করতে রাজি হয়। তিন কোটি পনের লাখ টাকা মূল্যের ৯০ শতাংশ জায়গাটি কিনতে গত ১৩ নভেম্বর ২০১৭ সালে জসিম ইলিয়াছসহ বাকি পাঁচজনের অংশীদারে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রার্ড বায়নানামা চুক্তিপত্রনামা (৪৮২২/১৭) দলিল স্থাপন করেন। যে অংশীদারে ইলিয়াছের ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা ছিল। দলিলে উল্লেখ ছিল যে, ৯০ শতাংশ জমির সরকারী কর, খাজনাদি আদায় পূর্বক নির্ভেজাল, নিষ্কন্টক করে দেওয়ার সাপেক্ষে পাওনাদারের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করে জসিম ও ইলিয়াছসহ ০৭ জনের নামে রেজিষ্ট্রি দিতে বাধ্য থাকবে বিক্রেতাগণ।
পরবর্তীতে মো. ইলিয়াছ বিদেশে চলে গেলে সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি করে নেয়ার জন্য বিদেশ থেকে জসিম উদ্দীনের ইষ্টার্ণ ব্যাংক লিঃ, জুবলী রোড শাখা, চট্টগ্রাম হিসাব নং- ০০৩১৫১০৫৬৮২৩০ এ বিগত ৭ মে ২০১৮ সালে চল্লিশ লাখ আশি হাজার পাঠান।
পরে আসামী জসিমসহ সাত জন অংশীদারের মধ্যে মোঃ মুছা ও মোঃ আবু বক্করের সমন্বয়ে একটি যৌথ একাউন্ট করলে ইলিয়াছ বিদেশ থেকে বিগত ২০ অক্টোবর ২০১৮ সালে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিঃ, মুরাদপুর শাখা, চট্টগ্রামে আরো আট লাখ টাকা পাঠান।
জমির মূল্য তিন কোটি পনের লাখ টাকা হলে মামলার বাদী ইলিয়াছের ভাগে পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকা পড়লেও জমির মূল্য পরিশোধ এবং
উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও অন্যান্য কাজের জন্য তিনি তেষট্টি লাখ আট হাজার টাকা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।
তদন্ত সূত্রে আরো জানা যায়, টাকা পাঠানোর পর আসামী জসিমের মাধ্যমে বিক্রেতাদের বারবার বায়নাকৃত জায়গাটি রেজিষ্ট্রি দিতে বলার পরেও তারা দিতে রাজি হয়নি। বরং তফসিলোক্ত বায়নাকৃত ৯০ শতাংশ জমির মধ্যে পূনরায় ৬৮.৭৬ শতাংশ জমির মূল্য দুই কোটি চল্লিশ লাখ ছেষট্টি হাজার টাকা নির্ধারণ করে আগের বায়নাকৃত এক কোটি টাকা নগদে গ্রহন অবশিষ্ট এক কোটি চল্লিশ লাখ চেষট্টি হাজার টাকা তিনটি একশো টাকার নন-জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে টাকা প্রাপ্তির তারিখ বিহীন রশিদপত্র তৈরি করেন।
সেই টাকা গ্রহণ করে তফসিলোক্ত সম্পত্তি ইলিয়াছসহ সাত জন অংশীদারের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কথা থাকলেও বিগত ১০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে আসামী জসিমের কু- প্ররোচনায় অন্যান্য আসামীগণ সকলে বায়নানামায় উল্লেখিত বাদী ইলিয়াছসহ সাতজন অংশীদারের নামে সাব কবলা রেজিষ্ট্রি না দিয়ে বরং জসিম উদ্দীনের স্ত্রীর নামে সম্পত্তি থেকে ৪৯.১১ শতক সম্পত্তি দলিল (দলিল নং- ১৪৩/১৯) মূলে আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করেন এবং একই তারিখে আসামী জসিম উদ্দীন তাঁর নিজের নামেও সম্পত্তির মধ্য থেকে ১৯.৬৫ শতক সম্পত্তি দলিল (দলিল/১৯) মূলে আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করেন।
পরবর্তীতে ইলিয়াছ এ বিষয়ে অন্যান্য আসামীদের সাথে যোগাযোগ করলে সম্পত্তি রেজিষ্টি বিষয়ে তারা কিছুই জানে না বরং সবকিছু জসিম উদ্দীন জানেন বলেন বলে জবাব দেন। আসামীদের কথায় সন্দেহ হলে মামলার বাদী ইলিয়াছ জসিম উদ্দীন সিআইপিকে ১নং আসামী করে আরো ২৪ জনের নামে প্রতারনার মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রকাশ্য ও গোপনে তদন্ত করা হয়। তদন্তকালীন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশানার মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর/দক্ষিণ), সিএমপি, চট্টগ্রাম মামলার তদন্ত তদারকী করেন বলে জানা যায়।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এমজাদ হোসেন বলেন, আসামী জসিম উদ্দীন সু-কৌশলে বাদী মো. ইলিয়াছের সাথে প্রতারণা করেছেন। এ জন্য তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। যে কোন সময় সে গ্রেফতার হতে পারে।