জীবন বাজি রেখে দেশের প্রেমে ঝাঁপিয়ে পড়া এ ব্যক্তির নাম মুক্তিযুদ্ধা রফিক আহমদ ।ডাঃ মান্নান, চৌধুরী হারুন, নূরুল ইসলাম চৌধুরীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করেন তিনি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলেনি।
রফিক আহমেদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্দা গ্রামের বাসিন্দা। পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্টাতা সদস্য। সমসাময়িক মহসিন খান
,হামিদ, কাশেম সহ অনেকে। সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত রফিক আহমেদ বর্তমানে নিজের গ্রামের বাড়িতে জীবনের শেষ সময়টুকু অতিবাহিত করছেন অসুস্থতা ও নানা দুঃখ কষ্টে।
রফিক আহমেদ দৈনিক… বলেন ১৯৭১ সালে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজের গনিত বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এপ্রিলে স্যারসহ আমরা ভারত যাওয়ার জন্য বান্দরবান থেকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হই। স্যারের গাড়ি ছিল সবার আগে। জিপ রওয়ানা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশে। ইমাম গাজ্জালি কলেজ পার হবার পর আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। জানতে পারি স্যারের উপর হামলা হয়েছে। এ হামলায় স্যারসহ অনেকে শহীদ হন। আমার গাড়ি একটু ব্যবধান থাকায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গিয়ে ফিরতে সক্ষম হই। আরেকবার গেরিলা যুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম আইস ফেক্টরী রোডে পাকবাহিনীর হাতে ধৃত হই, দোস্ত বিল্ডিং এলাকায় অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হই এমনকি গুলি করার সিদ্ধান্ত নিতে থাকে এক পর্যায়ে পাগল ভেসী একলোক এসে আমাকে ছাড়িয়ে নেন। তিনি আরও বলেন, এরপর পটিয়ার পূর্ব পাহাড়ে খুরুশিয়ার বাঘাইয়া চাকমার খামার বাড়িতে লাঠি আলম, হাবিলদার ইছহাকের অধীনে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে যোগ দিই। মনসার টেক গৈড়লার টেক ভূর্ষি লালখান বাজার ওয়াসা বারিক বিল্ডিং এলাকায় অপারেশন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে হানাদার বাহিনী আমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আমার মা-বাবার উপর অনেক নির্যাতন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জীবিকার তাগিদে বিদেশে ছিলাম।’ফলে সঠিক সময়ে আবেদন নিবেদন করা সম্ভব হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি আবেদন করেছেন বলেও জানান রফিক আহমেদ; যার নাম্বার ৭০৮১৬৪০০৫২০৩২৫। এছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ এপ্রিল ২০২২ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরও একটি আবেদন করেন তিনি।সেটা সমাজ সেবা কার্যালয়ে নথিভূক্ত হয়। এর পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয় কতৃক একটা ফরোয়ার্ডিং দেয়া হয় ২৩ শে মার্চ ২০২৩ সচিব মুক্তিযুক্ত বিষয়ক মন্ত্রনালয় বরাবরে। এখনো অধরাই রয়ে গেল সেই অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতি।
রফিক আহমদের সহযোদ্ধা সাবেক আমুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন বলেন, ৬৯-এ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে পড়ার সময় ১১ দফা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ছিলেন রফিক । রণাঙ্গণে আমরা প্রফেসর দিলীপ চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি।
মিজোরামের দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পের গ্রুপ লিডার এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন জানান, রফিক আহমেদ তার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। রফিক আহমেদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে প্রত্যয়নও দিয়েছেন এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন।
রফিক আহমেদের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই বলেছেন, ‘রফিক আহমেদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কী কারণে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি বুঝতে পারছি না। আমরা তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করছি।
পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘রফিক আহমেদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও ২০১৭ সালের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর নাম আসেনি। আমি আশা করছি পরবর্তী ধাপে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হবে।