বরিশাল ব্যুরো।
পটুয়াখালীর মুরাদিয়া আজিজ আহম্মেদ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আহসানুল হকের বিধি বহির্ভূত নিয়োগে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ হিমাগারে রেখে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অপরদিকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক এবাদুল হকের চাকুরীর বৈধতা প্রশ্নের সমাধান দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশও উপেক্ষা করা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কলেজ গভর্নিংবডিকে আদেশ দিলেও গত দেড় বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি চলছে গড়িমসি।
অভিযোগ উঠেছে, কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ এক হয়ে উচ্চ মহলের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে সময় ক্ষেপন করে চলেছে। এদিকে গভর্নিংবডির সভাপতি অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে কলেজের সুনাম নষ্টের দায়ে প্রভাষক শিলা হালদারকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও অধ্যক্ষ আহসানুল হকের বিরুদ্ধে গত একবছরেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সুচতুর আহসানুল হক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে স্ব-পদে বহল থেকে পূর্ববত: স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ওই কলেজের প্রভাষক ফরিদ আহম্মেদ‘র এ সংক্রান্তে দুমকি থানায় দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরিতে অধ্যক্ষ আহসানুল হকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত জাল-জালিয়াতির ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ দিলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। সেক্ষেত্রে কলেজ অধ্যক্ষের নারী কেলেঙ্কারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নাটকীয়ভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি প্রমান মিলেছে সার্বিক তদন্তে।নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সহকর্মী নারী শিক্ষিকা শিলা হালদারের সাথে পরকিয়াসহ অনৈতিক কর্মকান্ডের বাদানুবাদের ৮ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড গত ৩১'জুলাই-২২ ইং তারিখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠলে একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতির নানান কাহিনী বেরিয়ে আসতে থাকে। একই বছর কলেজ প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য মুরাদিয়ার বাসিন্দা মোঃ জসিম উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পৃথক দু‘টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ আহসানুল হক ও প্রভাষক এবাদুল হকের নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অধ্যক্ষ আহসানুল হকের নৈতিক স্খলন, শিক্ষকদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের সময় পদবী ও অভিজ্ঞতা গোপন রেখে নিয়োগ লাভ করায় তাঁর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতিকে অনুরোধ জানিয়েছেন।অপরদিকে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক তপন কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অধ্যক্ষ আহসানুল হকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এবং কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক মোঃ এবাদুল হকের অবৈধ নিয়োগ বিষয়ে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা ও মতামত দিতে নির্দেশ দেন।অভিযোগ ওঠেছে, কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি দুমকি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশীদ হাওলাদার অভিযুক্তদের রক্ষা করতে প্রাপ্ত চিঠির যথাযথ ব্যাখ্যা ও মতামত এড়িয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ার অযুহাত দেখিয়ে সময় চেয়ে কালক্ষেপন করেছেন।অথচ গভর্নিংবডির সদস্যরা অন্তত ৩টি বৈঠক করলেও এ বিষয় কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে কিভাবে কাকে রক্ষা করা যায় তার কৌশল আটে। সে ক্ষেত্রে শিলা হালদারের পারিবারিক কলোহকে সামনে এনে একটি ষড়যন্ত্রের নাটক সাজিয়ে তা প্রতিষ্ঠায় উচ্চ মহলে প্রভাবিত করার নানা পদক্ষেপে অগ্রসর হওয়ায় দিন গেলেও কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারছে না। বরং সময় চেয়ে ঘষা মাজা কাগজ-পত্র পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালকে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ব্যাগে আনতে সক্ষম হয়েছে। অথচ ডিজি নিজেই ব্যবস্থা গ্রহনে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছিলো ডিজি অফিস, কিন্তু কেন অদ্যবধি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।
এ ছাড়া একটি যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় টানা দেড়মাস জেল হাজতবাসের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া একই কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক আল-আমীনের মামলা নিস্পত্তি হওয়ার আগেই বিধি বহির্ভূতভাবে বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার ও বেতন ভাতা প্রদান করে অপরাধের প্রশ্রায় দেয়ার প্রমাণ রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান ড. হারুনুর রশিদ বলেন, আইনগত কিছু জটিলতার কারনে কলেজ অধ্যক্ষসহ অপর দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা সময় লাগছে। পক্ষান্তরে বলা হয় তাহলে কোন বুনিয়াদে প্রভাষক শিলা হালদারকে সাময়ীক বরখাস্ত করা হলো। এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সময় আসলে দেখা যাবে কে দোষী। রেহাই দেয়া হবে না কাউকে। তবে শিলা হাওলাদার ও কলেজ অধ্যক্ষ আহসানুল হকের বিষয়টি পারিবারিক দ্বন্দ্বের ফসল। ফাঁসিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিন্ন ভাষায়, কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাহলে গত দেড় বছরে কলেজ নিয়ে অর্থাৎ নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক অভিযোগের প্রমাণ থাকা সত্বেও ব্যবস্থা নিতে অন্তরায় কোথায়? এমন প্রশ্নে শিলা হাওলাদের দিকে তীর ছুড়ে দোষিদের ব্যবস্থা গ্রহনে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষমান থাকার কথা জানিয়ে এড়িয়ে যান প্রভাষক এবাদুল হক ও আল-আমিনের বিষয়টি।
এই নিয়ে এখন কলেজ গভর্নিংবডির সদস্য ও শিক্ষকদের মধ্যেই দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় কলেজ নিয়ে যেন মিডিয়ায় কোন সংবাদ প্রকাশ না হয় সেই মিশন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন কলেজ গভর্নিংবডি। কারন গভর্নিংবডির সভাপতি তিনি আওয়ামী লীগের নেতা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বলে কথা।
লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ সম্পাদিত ও হাজী জসিম উদ্দিন প্রকাশিত