থানচি প্রতিনিধি ॥ দীর্ঘ ৯ মাস জংঙ্গলে ও আত্বীয়দের বাড়ীতে আশ্রয়িত থাকার পর নিজ বাড়ীঘর ফিড়ে পাওয়া আনন্দ খুশি কাঁধে নিয়ে জীবন বেঁচে থাকার তাগিদের বাড়ী ঘরে রেখে যাওয়া গোলা ভরা ধান-চাল, খাদ্য, গৃহপালিত হাঁস- মুরগি, গরু-ছাগল, জুমের পাওয়া চাল কুমড়াসহ তরি-তরকারী, হাঁড়ি-পাতিল, সোলারসহ তছনছ হয়ে সব নস্ট হয়েছে।
তাছাড়া ভাঙ্গা ঘরে চতুর দিকে ঘাঁস আর ঘাঁস দেখে অশ্রুভরা কাঁধে সরকারী বেসরকারী পৃষ্টপোষকতা আবেদন করেছেন বান্দরবানে থানচি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে প্রাতা পাড়া বাসিন্দা ১১ বম পরিবারের সদস্যরা।
বম জনগোষ্ঠিরা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সাপ্তাহের গভীর রাতে আমাদের পাড়া (প্রাতা পাড়া) কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ সদস্য ও কয়েকজন জঙ্গি অস্ত্রসহ প্রবেশ করেন। হঠাৎ তারা পাশ্ববর্তী বাকলাই সেনা ক্যাম্পে লক্ষ্য করে প্রথম গুলি করে হামলা করেন। সেনা সদস্য পালতা হামলা চালাইলে আমরা (পাড়াবাসীরা) সাথে সাথে বিভিন্ন জঙ্গলে পালিয়ে যায়। সে থেকে কয়েকদিন জঙ্গলের অবস্থানের পর আশে পাশে পাড়া মহল্লায় আশ্রয় নিয়ে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে যায়।
কিন্তু কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ সদস্য ও কয়েকজন জঙ্গি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সারারাত গুলাগুলি পরের অনাকাঙ্খিত সংঘাতের দীর্ঘ ৯ মাসের ভয়ে পালিয়ে থাকা বম জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজ এলাকায় গত শনিবার ১৮ নভেম্বর সেনা বাহিনীদের সহায়তা পাড়ায় ফিরেছে থানচি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে প্রাতা বম পাড়া ১১ পরিবারের ৪৯ জন সদস্য, রোয়াংছড়ি উপজেলা পাইক্ষ্যং পাড়ার ৫৭ পরিবারে ২০০ জন, দুর্নিবার পাড়া ২৭ জন এবং ক্যাপ্লাং পাড়ার ১৭ জন।
সরেজমিনের গিয়ে রবি ও সোমবার ১৯-২০ নভেম্বর প্রাতা পাড়ায় গিয়ে দেখলাম, যারা ফিরতে পারেনি তাদের ঘরগুলো লতাগুল্ম ঢেকে গেছে। খালি ঘর পড়ে আছে এখনও। কাঠের ঘরের বারান্দায় এলামেলো পড়ে রয়েছে কাপর-চোপড়। কারও কারও চোখে মুখে ঘরে ফেরার আনন্দের মাঝে ও হাসি দেখলাম। কিন্তু এখনও ভেতরে চাপা আতঙ্ক আর ভয় ছাড়া খাদ্য অভাব আশংঙ্খা করেছেন তারা। নিজ বাড়ীতে ফিড়ে চমকোয়াল বম ৭০ বছর বয়সী জানালেন, আমাদের পাড়া মোট ২৮ পরিবার মার্চ মাসে সবাই জঙ্গলে পালিয়ে আমাদের পরিবারের ছোট ছোট শিশু ও মাতৃকোলে থাকায় পরিবারের ১০-১২ জন সদস্য নিয়ে পাশ্ববর্তী সেরকর পাড়ায় আত্বীয় বাড়ীতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু সেখানে কোন কাজ করতে সম্ভব হয় নি। এপ্রিল তার এক বড় দিদি থেকে ৫০ হাঁড়ি ধান ধার নিয়েছে। ঘরে রেখে যাওয়া ধন,কাপর চোপর,বই পুস্তক,হাঁড়ি পাতিল,বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা জিএফএস পাই সবই নস্ট হয়ে গেচ্ছে। আগামিতে শান্তিতে থাকার জন্য জুমের ফসল না পাওয়ার পর্যন্ত সরকারী বেসরকারী সহযোগীতা দিলে আমরা বাঁচতে পারবো। এছাড়া সম্ভাব্য রাস্তা দেখছি না।
একই কথা জানালেন ফিরে আসা ছানৎিলন বম ৫০,পারকেল বম ৫৩, রনি বম ৩৮সহ সকলেরই। তারা জানান, হারানোর বেদনা, পালিয়ে থাকার বেদনা সবাইকে সমানভাবে স্পর্শ করবে না। পৃথিবীর আর কোথাও যেন ফিলিস্তিন তৈরি না হয়। এছাড়াও চলতি নভেম্বর ডিসেম্বরে জুম কাটবো, এপ্রিল মে মাসের জুমের ধান রোপন করবো, জুলাই আগস্ট মাসের নতুন ফসল পাবো সে পর্যন্ত আমাদের ১১ পরিবারের ৪৯ সদস্যদের খোরাগ চালানো মত এবং ঘরবাড়ীর মেরামতের জন্য সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগীতা কামনা করেন।
সম্প্রতি রুমা উপজেলা জেলার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের মধ্যে চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে। ডিসেম্বরে মাঝামাঝি সরাসরি দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা। এই বৈঠক ফলপ্রসু হোক সে আশা ভরশা ঈষরে নিকট প্রার্থনা করেন তারা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ জুন পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষে পরিষদ চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্যশৈহ্লা শান্তি প্রক্রিয়াকে প্রানবন্ত করার ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করে। গত ১৯ জুলাই, ৪ আগষ্ট, ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক স্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ সদস্য ও ভিডিও কমফারেন্সের ভার্চুয়ালি ভাবে কেএনএফের ৪ সদস্য বৈঠকে অংশ নেয় এবং গত ৫ নভেম্বর সরাসরি প্রথম বৈঠক হয়। বৈঠকের চারটি বিষয়ে সিদান্ত হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে ইউপি মেম্বার রুংৎিল বম ও ৭.৮.৯ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী মেম্বার রিংকো ম্রো বলেন, আমরা তাদের তালিকা ও প্রয়োজনীয় সাময়িক চাহিদা উপর রিপোর্ট মাধ্যমে সহযোগীতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের জমা করে দিয়েছি। সেখান থেকে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ঠ উর্ধতম কর্তৃপক্ষের অনুমোদন হলে শ্রীগরই সহযোগীতা পেয়ে যাবে।
বাকলাই সেনা ক্যাম্পের অধিনয়ক ক্যাপ্টেন সালমান বলেন, আমি প্রাতা পাড়া সরেজমিনে গিয়েছি। সাময়িক ভাবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা,চাল,ডাল,তৈল,লবন,চিনি,ময়দা সাধ্যনুসারে আমাদের সেনা সদস্যদের রশদ থেকে সহযোগীতা করেছি। প্রয়োজনের আর ও দেব। এলাকার শান্তি সুরক্ষা স্বঅবস্থান রাখা ও বসবাসের জন্য স্বাভাবিক জীবন জ্ঞাপনের উপযুক্ত সময় অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।
যোড়াযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মুহা: আবুল মনসুর বলেন, সরেজমিনের তদন্ত করে অবশ্য তাদের সরকারী ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।