1. info@www.dainikdeshbarta.com : bissho sangbad Online : bissho sangbad Online
  2. info@www.dainikdeshbarta.com : Dainik Desh Barta :
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
চন্দনাইশে পূর্ব জোয়ারায় ২০ দিনব্যাপী ভিক্ষু পরিবাসব্রত নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগে সুযোগ না দেওয়ায় মানববন্ধন করলো রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এর শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. দেলোয়ার হোসেনের ইন্তেকাল জমকালো আয়োজনে দোহাজারী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করলেন জাতীয় মহিলা ফুটবলর ঋতুপর্ণা চাকমা চট্টগ্রামে অসহায়দের মাঝে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এর শীতবস্ত্র বিতরণ বোয়ালখালীতে পিক-আপ মোটর সাইকেল সংঘর্ষে  দুই মোটরসাইকেল আরোহী আহত বোয়ালখালীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইল্ল্যার অউন ফোয়ানি উৎসব চন্দনাইশ বরকলে জামায়াতে ইসলামীর শীতবস্ত্র বিতরণ এপেক্স ক্লাব অব পটিয়ার উদ্যোগে শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। ইক্বরা মডেল মাদ্রাসায় সবক নিয়েছে শিক্ষার্থীরা

গণতন্ত্রহীনতা ও বৈষম্য স্বাধীনতার অর্জনকে মলিন করেছে! -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

সম্পাদকীয়ঃ
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ বাঙালির ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করে। এই দিনটি শুধু বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতার নয়, একটি জাতির আত্মমর্যাদা, সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক। স্বাধীনতা কখনোই কারও দানের বিষয় ছিল না; এটি বাঙালির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও রক্ত দিয়ে কেনা। একাত্তর একটি জাতিকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও বৈষম্য, গণতন্ত্রহীনতা ও সাম্প্রদায়িকতা আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে গভীর শিকড় গেড়ে বসেছে। ফলে নতুন কোনো পরিবর্তন বা আন্দোলনের বিজয়কে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলা একাত্তরকে খাটো করা। একাত্তর শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি সংবিধানের ভিত্তি হয়েছিল। রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতান্ত্রিকতা আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে।গণতন্ত্রহীনতা ও বৈষম্যের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থানও আমাদের স্বাধীনতার অর্জনকে মলিন করেছে। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হয়েছে, যা কেবল সংখ্যালঘুদের অধিকার নয়, গোটা সমাজের ঐক্য ও সহাবস্থানের ওপর আঘাত হেনেছে। এই বৈষম্য, গণতন্ত্রহীনতা ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান কীভাবে ঘটবে।
প্রথমত, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা দলের কাছে কেন্দ্রীভূত না রেখে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর সংসদ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, আর্থিক বৈষম্য দূর করতে কল্যাণমূলক অর্থনীতি অনুসরণের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা ছাড়া সমাজের বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে মুক্ত হতে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিজয়ের মাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিক্ষা দেয় যে কোনো পরিবর্তনই সহজে আসে না। আত্মত্যাগ, সাহস ও ঐক্যের মাধ্যমে একটি জাতি তার লক্ষ্যে পৌঁছায়। আজ আমাদের আবারও সেই বিশ্বাসের কাছে ফিরে যেতে হবে। একাত্তর ছিল আমাদের প্রথম স্বাধীনতা, যা আমাদের পরিচিতি দিয়েছে। এখন প্রয়োজন সেই স্বাধীনতার প্রকৃত মানে বাস্তবায়ন করে একটি সাম্য, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন করা। সঠিক ইতিহাস সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রথমত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয় বৃত্ত ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক ধারার বাইরে আনতে হবে। ইতিহাস কোনো দল বা ব্যক্তির একক সম্পত্তি নয়; এটি জাতির সম্পদ। ১৯৭১ সালে যে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার পটভূমি এক দিনে তৈরি হয়নি। কোনো একজনের হাত ধরেও ইতিহাস এগিয়ে যায়নি। আবার এটাও ঠিক যে অনেক চরিত্র থাকলেও সব কাহিনিতেই একজন প্রধান চরিত্র বা নায়ক অবশ্যই থাকে। অনেক মানুষের ছোট-বড় অনেক অবদান থাকলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ‘নায়কোচিত’। সে জন্যই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি, নায়ক ও ত্যাগের সত্যতা নির্মোহভাবে উপস্থাপন করতে হবে। স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ে এমন একটি ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভক্তি নয়, বরং একতাবোধ তৈরি করবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো সাহিত্য, সংগীত, নাটক ও চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু সৃজনশীল কাজ হয়েছে, তবে সেগুলোর মাধ্যমে কখনো কখনো দলীয় প্রচারণা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এই ক্ষেত্রে শিল্পী ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের দায়িত্ব হলো সত্যনিষ্ঠ উপস্থাপনা নিশ্চিত করা। সৃজনশীল কাজ কেবল বিনোদন নয়; এটি সমাজে সচেতনতা সৃষ্টিরও একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তবে সঠিক ইতিহাস প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হলো রাজনৈতিক বিভাজন। আমাদের দেশের রাজনীতি আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গটি অনেক সময় বিভাজন ও মতবিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিজয়ের মাসে আমরা কি শপথ নিতে পারি না যে আমরা আর কোনোভাবেই বিভাজনের হাতিয়ার হব না! ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি হবে আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি। দলমত-নির্বিশেষে সব পক্ষকে একত্রে কাজ করতে হবে, যেন জাতি এই ইতিহাসকে গর্বের সঙ্গে বহন করতে পারে। স্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং মানবিক সমাজ গড়ে তোলা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমরা কি সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি? দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমাদের রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজব্যবস্থায় আইনের শাসনের অভাব একটি বড় ঘাটতি। বিজয়ের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে এসব অসামঞ্জস্য দূর করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া আজ সময়ের দাবি। আজকের তরুণদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধকে আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক করতে হবে।
বিজয়ের মাস আমাদের শুধু উদ্‌যাপনের সুযোগ নয়, এটি আত্মবিশ্লেষণেরও সময়। জাতি হিসেবে আমাদের কোথায় উন্নতি হয়েছে এবং কোথায় পিছিয়ে আছি, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। আমাদের শপথ নিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলার। মুক্তিযুদ্ধ তখনই প্রকৃত অর্থে সফল হবে, যখন আমরা আমাদের দেশকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পারব, যেখানে সব নাগরিক সমান মর্যাদা, অধিকার ও সুযোগ উপভোগ করবে। বিজয়ের চেতনা আমাদের জন্য শুধু অতীতের গর্ব নয়, এটি ভবিষ্যতের পথচলারও প্রেরণা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট