স্বাধীনতা নাকি সাম্য?
ডঃ মোসাম্মৎ নাজনীন সুলতানা
কোনটি আমাদের চাওয়া ছিল?
বৈষম্য দূরীকরণ, আশরাফ-আতরাফ দূরত্ব ঘোচানো?
নাকি কেবলি দূর্নীতি করবার স্বাধীনতা,
হাজার খুশি মিথ্যে বলবার স্বাধীনতা।
কপটতা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনার জবাবদিহিতা না থাকবার স্বাধীনতা?
এসব কি আগেও ছিল না?
একটা মানচিত্রের, একটা পতাকার সত্যিকার প্রয়োজন কোথায় ছিল?
শোষণের রাজনীতি কি ফুরিয়েছে?
ঘরে বাইরে নারী-শিশু-বৃদ্ধরা কি আজো নিরাপদ হয়েছে?
নারীরা কি আজো পুরুষের সমান যোগ্যতায় সমান মর্যাদা পেয়েছে?
আমাদের সবুজতা কি আমাদের হৃদয় কোমল করেছে?
হয়তো চক্ষু শীতল করেছে, তিক্ত স্বাদের লালাভ রক্তের পিপাসা কি মিটিয়েছে এতোটুকু?
আজ কি আমরা রক্তচোষা বাঙালীতে পরিণত হয়নি পাকিস্তানী হানাদারদের মতো?
এই বাংলায় কি ইয়াসমিন, শারমিন, তনু, নুসরাত, এলমা, তাসনিয়া, আয়াতেরা ধর্ষিত, নির্যাতিত হয়ে মরেনি?
কেরোসিনে পুড়ে, এসিডে ঝলসে মৃত্যুর মিছিলে নাম লিখেনি অনেক গৃহবধূ, রমণী, বালিকা?
হাজারো দুর্ঘটনায় লক্ষ প্রাণ হারায় না প্রতিনিয়ত?
পরিসংখ্যানটা ৩০ লাখ কিনা জানি না, তার বেশি নাকি কম তাও জানি না।
কিন্তু মরেছে তো, মরে তো প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, খবরের কাগজের শিরোনাম থেকে কোণার ছোট্ট খবর, সবখানে তার অস্তিত্ব।
কত শত তরুণের তাজা প্রাণ ঝরে গেছে পুলিশের গুলিতে, প্রতিপক্ষের আঘাতে, হিসেব আছে?
সংখ্যায় মোট কত? ৫১ বছরে?
কত শত প্রাণ ধুকে ধুকে জীবন কাটায়, কত প্রাণ ডুকরে কাঁদে, কতজন গুম হয়, হারিয়ে যায়,
শ্রমবাজারে নিষ্পেষিত হয়, রানা প্লাজার মতো ভবনের নিচে চাপা পড়ে,
কত নারী শ্রমিক বিদেশে ধর্ষিত হয়, কত নারী-পুরুষে বেতন বৈষম্য দেশে-বিদেশে!
সাম্য কি পেয়েছি আমরা, যার জন্য তিরিশ লক্ষ জীবন গেছে, কত প্রাণ ভিটেমাটি হারা হয়েছে!
কত মা, বাবা, ভাই বোন, বীরাঙ্গনারা, যুদ্ধশিশুরা কেঁদে চলেছে!
এ সমাজে আজো আছে ভিআইপি, ইকোনোমিক, ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস কম্পার্ট্মেন্ট।
আছে পাহাড়ী, বাঙালী, আছে সেক্যুলার, ধর্মান্ধ, ধর্মবেত্তা,
আছে দাসত্ব, আছে সমাজের উঁচু, নিচুর আদি চল, শাসক, অপরাধী শ্রেণী।
হালে জঙ্গী, কুলটা নারী, সতী নারী দ্বন্দ্বালোচনা,
আছে রাজনীতিক বনাম বুদ্ধিজীবির শ্রেষ্ঠত্বের তক্ক,
আছে ব্যঙ্গ সুশীল সমাজ, প্রশাসনের অহংবোধ, রক্তচক্ষুর তড়পানি, অনৈতিক চাহনি।
বলবেন এতো স্বাভাবিক, এমন কিছু তো থাকতেই হবে।
পারবেন আপনি বস্তিতে থাকতে, রাস্তায় বা নিদেন পক্ষে রেলস্টেশনে চাদর মুড়ে ঘুমোতে?
শীতের রাতের কাঁপুনি বা গরমের মশার জ্বালা সইতে?
একটা শালীন আবাস, যোগাযোগব্যবস্থা আপনার চাই তো!
আমি ভাবি, সামর্থ্য আর সাম্য, এ দুটো কথা কি এক? নাকি আলাদা ভাবনা, একটা আলাদা বোধের জায়গা?
একটা আত্মমর্যাদার বোধ কি আমাদের তাড়া করে ফেরে না? ভাবছি… অনন্তর ভাবনা!
কোথায় সে সাম্য, যার কথা নজরুল বলে গেছেন, যার কথা রেহমান সোবহান লিখেছিলেন,
বল হে স্বাধীনতা!