এন.এ সাগরঃ
কক্সবাজারে ৬ টি তারকামানের হোটেল-মোটেল ছাড়া বাকিগুলো চলছে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ছাড়া।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে কলাতলী,কলাতলী থেকে মাত্র তিন বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫৩৮টি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-কটেজ। এর মধ্যে তারকামানের ৬টি হোটেল বাদ দিয়ে ৫৩২টিতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই। সেপটিক ট্যাংক দিয়ে হোটেলগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। এসটিপি না থাকায় অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের বর্জ্যে নদী ও সমুদ্রে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণীকুল মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যরে দূষণে ভবিষ্যতে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়তে পারে এই সমুদ্র সৈকতটি।পর্যটকদের উঠছে আবাসিক সুবিধা দিয়ে গড়ে উঠা কক্সবাজারের চারপাশে ৫০০ শতাধিক বেশি হোটেল- মোটেল, যার ক্ষতিকর সব বর্জ্যরে ঠিকানা ওই সৈকতে গিয়ে পড়ছে। পাশাপাশি চিংড়ি রেণু পোনার হ্যাচারির ক্ষতিকী পদার্থ মিশছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। এতে মারাত্মক হুমকিতে সৈকতের পানি, এবং জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।
হোটেল-মোটেলের মালিকেরা বলছেন, এসটিপি স্থাপন অনেক ব্যয়বহুল। তা ছাড়া নকশা অনুমোদনের সময় এসটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এর পরিবর্তে বাসাবাড়ির আদলে (ভূগর্ভে) তিন চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক বানানো হয়েছে।
তবে অন্যদিকে পরিবেশবাদী ব্যক্তিরা বলছেন, এসটিপি না থাকায় বর্ষা মৌসুমে সেপটিক ট্যাংকের মলমূত্র নালা ও রাস্তা দিয়ে সমুদ্র ও নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়ছে।
কক্সবাজারের দখল- দূষণ প্রতিযোগিতা চলছে ::
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলাতলীর সি সান গেস্টহাউস গ্যালাক্সি রিসোর্ট, হোটেল সিপাল, বীচ হলিডে, হানিমুন রিসোর্ট, ডায়মন্ড প্যালেস, মোহাম্মদিয়া গেস্টহাউসসহ অন্তত ১০০টি হোটেল-মোটেল ঘুরে এসটিপি পাওয়া যায়নি। তবে তারকা মানের ছয়টি হোটেলে এসটিপি থাকার বিষয়টি দাবি করা হয়েছে।
কলাতলী সড়কের পূর্ব পাশে সি সান গেস্ট হাউসে কক্ষ আছে ৬০ টির বেশি। ১৬ বছর আগে নির্মিত হোটেলটিতে কোনো এসটিপি নেই। তবে ভবনের নিচে আছে তিন চেম্বারবিশিষ্ট (কক্ষ) একটি সেপটিক ট্যাংক। গেস্টহাউসের ব্যবস্থাপক মো. ইদ্রিস বলেন, হোটেলে মলমূত্র সেপটিক ট্যাংকে জমা হলেও অতিথিদের (পর্যটক) ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা সংরক্ষণের ব্যবস্থা তাঁদের নেই।
পরিবেশ আন্দোলন বাপার কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম বলেন,দীর্ঘদিন ধরে শুনতেছি সেন্ট্রাল এসটিপি করা হবে। এখন ছয়-সাতটি তারকা মানের হোটেলে এসটিপি আছে দাবি করা হলেও তা দৃশ্যমান নয়। শহরে যখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়, তখন সেপটিক ট্যাংকগুলো মলমূত্রে ভরে যায়। নালা দিয়ে মলমূত্র খাল, নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ে। সৈকত ও শহরে প্রতিদিন ৯৭ মেট্রিক টন প্লাস্টিকসহ ময়লা জমছে। কিন্তু সংরক্ষণের জন্য ডাম্পার স্টেশনও নেই। এতে নদী-সাগরসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এটি এখন সময়ের দাবি। এটি করা হলে কক্সবাজারে পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমবে।
স্বপ্নীল সিন্ধু,বাংলাদেশ নেভি ফ্লিট ক্লাব এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. শরীফ সোহেল বলেন,কক্সবাজার হোটেল মেটল জোনে বিভিন্ন জায়গায় বর্জ্য দেখা যায়, সকল হোটেল কিন্তু সেপটি ট্যাংক এবং পি এস পিটি থাকা দরকার, এ বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু প্রতিমাসে একটা টাকা ধার্য করা হয়। কিনতু তার পর দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় বা স্থানে ময়লার স্তুপ পড়ে থাকতে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তার সাথে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটক ব্যঘাত ঘটছে।প্রায় ৫ শত ও অধিক হোটেল মোটেল, কটেজ, রিসোর্ট রয়েছে তারাও যদি আরেকটু বর্জ্যটা সঠিকভাবে রাখে তাহলে যারা বর্জ্য নিয়ে তাদের ও সুবিধা হয়। কক্সবাজার পৌরসভা যারা কাজ করেন তারা যদি সময় মত বর্জ্য নিয়ে যায় আসা করি সুন্দর একটি পরিবেশ দিতে পারবে কক্সবাজার পর্যটন শহরে আসা পর্যটকদের।
পাঁচ তারকা মানের হোটেল সিগালে এসটিপি আছে জানিয়ে হোটেলটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী বলেন, এসটিপি নির্মাণ ব্যয়বহুল বলে শহরের অধিকাংশ হোটেলের মালিক সেপটিক ট্যাংক বসিয়ে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। তবে এখন কেন্দ্রীয়ভাবে এসটিপি স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, পাঁচ শতাধিক হোটেলের ৯৯ শতাংশেরই এসটিপি নেই। হোটেলের বর্জ্য ও মলমূত্র সরাসরি নদী ও সাগরের পানিতে চলে যাচ্ছে। সাত মাস আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এসটিপির তথ্য দিতে প্রথম দফায় ১৩৪টি হোটেল-গেস্টহাউসে চিঠি পাঠান। এর মধ্যে ছয়টি হোটেল এসটিপি আছে বলে জানায়। ৩৯টি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁদের এসটিপি নেই, তবে তিন চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক আছে। বাকি ৮৯টি হোটেল চিঠির জবাব দেয়নি। দ্বিতীয় দফায় অন্যান্য হোটেলের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
কক্সবাজার হোটেল–গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে ৫৩৮টি হোটেলের পাশাপাশি আরও দুই শতাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। অধিকাংশ হোটেল ৪-৫ কাটা জমির ওপর নির্মিত। সেখানে এখন এসটিপি স্থাপনের সুযোগ নেই। তবে সব কটিতে সেপটিক ট্যাংক বসানো হয়েছে। কউক যদি কেন্দ্রীয়ভাবে এসটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়, তাহলে হোটেলমালিকেরা অর্থসহায়তা দেবেন।