উপ-সম্পাদকীয়ঃ
এক ওয়াক্ত নামাজ পড়লে ৫০ ওয়াক্তের নামাজের ছওয়াব হল সেইটা হল মসজিদে নববী। আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.) এর রওজা মুবারক। প্রতিদিন বিশ্বের মুসলিম দেশ গুলো থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছেন আমার প্রিয় নবীকে সালাম জানাতে।
মসজিদে নববীতে ইফতার রমজানে বড় প্রার্থী হল রমজান আসলে পুরো পৃথিবীর মুসলমানরা যেন ছুটে আসতে চায় এই মসজিদে নববীতে। নানা রঙের মানুষ। কারো রং কালো, কারো সাদা। কেউ বা শ্যামলা, কেউ সুন্দর, কেউ বা কুৎসিত। কবির ভাষায় কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভেতরে সবার সমান রাঙা। নানা রং আর ভাষার মানুষ হলেও সবার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হচ্ছে নবীর রওজায় সালাম দেওয়া। রমজানের শুরু থেকে মুসলমানদের ঢল নেমেছে সোনার মদিনায়। ওমরাহ করতে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন পবিত্র মক্কা আর মদিনা নগরীতে। কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ।
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবল্লাহ ধ্বনীতে মুখরিত এখন মসজিদে নববী। লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ পঙ্গপালের মতো ছুটছে নবী পাকের রওজার দিকে। রমজান এলে ওমরাহ পালনকারীদের এই ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবি আর তাহাজ্জুদ নামাজে ব্যস্ত সময় পার করেন মুসল্লীরা। আর রমজানে সবচাইতে বড় প্রাপ্তি মসজিদে নববীতে ইফতার। নানা হিসেব মতে প্রতিদিন রমজানে ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষ একসঙ্গে ইফতার করে এখানে। সৌদি সরকার প্রদত্ত বিশেষ ইফতারির প্যাকেট সরবরাহ করা হয় রোজাদারদের মাঝে। খুব সুন্দর এই ইফতারির প্যাকেটে থাকে ছয়টি খেজুর, একটি বন, একটি টক দই এবং একটি পানির বোতল। আর পুরো মসজিদ জুড়ে রোজাদারদের শীতল করতে রয়েছে জমজমের পবিত্র পানি। রোজাদাররা পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে ইফতার সারেন মসজিদে নববীতে। যেখানে খাওয়াটা মুখ্য নয় । মুখ্য বিষয় হচ্ছে নবী (সা.) এর রওজার পাশে বসে ইফতার সারতে পারা। যা সমস্ত মুসলমানের সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, শিশু থেকে নারী, বৃদ্ধ থেকে যুবক সব বয়সী মানুষের একটাই আকাঙ্ক্ষা নবীর রওজার পাশে বসে ইফতার সারা। মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীতে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে মসজিদের আয়তন বাড়ানো হচ্ছে। তারপরও রাস্তা, ফুটপাত, দালানের ছাদ, যে যেখানে পারছে নামাজে শরীক হচ্ছে। এ যেন এক বেহেশতি আবহ। রমজানে মক্কা এবং মদিনায় পথে পথে ইফতারী বিতরণ, করা হয় মানুষের মাঝে। করে কখন একজন রোজাদারের হাতে তার ইফতারের প্যাকেটটা তুলে দিতে পারবে। আবার ঢাক ঢোল পিটিয়ে নয় । রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ ইফতারি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা হাজার হাজার মানুষ মসজিদে নববীতে ইফতারে আসার সময় নিজেদের ঘর থেকে নানা পদের নাস্তা, চা, গাওয়া বানিয়ে নিয়ে আসেন। যা রোজাদারদের মাঝে বিতরণ করেন। এ যেন খাওয়াতে পারাতেই বড় সন্তুষ্টি। এই নগরীতে আসার আগে ধারণা ছিল না এই লাখ লাখ মানুষের ইফতার কিভাবে বিতরণ করা হয়, কিভাবে দ্রুত নামাজের আগে তা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু গত কয়দিনে সব ধারণাই যেন পাল্টে গেল। আছরের নামাজ শেষ হতেই নামাজের প্রতিটি কাতারে ছড়িয়ে পড়ে স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রথমে একটি লম্বা প্লাস্টিকের কাগজ বিছিয়ে দেওয়া হয়। যেটা আমাদের দেশে দস্তরখানা নামে পরিচিত। এই দেশে সেটাকে বলা হয় সুপরা। এরপর স্বেচ্ছাসেবকরা ইফতারির প্যাকেট রেখে দেন মুসল্লীদের সামনে। আর ইফতার শেষ হওয়ার সাথে সাথে কাতারের এক প্রান্ত থেকে টান দিয়ে সুপরা বা দস্তরখানাটি নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে নামাজের জায়গায় কোনো ধরনের ময়লা কিংবা খাবারের উচ্ছিষ্ট পড়ে না। তারপরও যদি কোনো কিছু পড়ে তা সাথে সাথে তুলে নিতে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক স্বোচ্ছাসেরক বেশির ভাগ আমাদের বাঙালি ভাই । ফলে একেবারে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সম্পন্ন হয় ইফতার। এত বিশাল আয়োজনে নেই কোনো শোরগোল। যদি কারো একাধিক প্যাকেট প্রয়োজন হয় তাহলে স্বেচ্ছাসেবককে ইশারা করলেই পৌঁছে যায় বাড়তি প্যাকেট। এত সুন্দর পরিবেশে
ইফতারের আয়োজন পৃথিবীর কোথাও রয়েছে কিনা বলা মুশকিল। সবকিছুতেই যেন পবিত্রতার পরশ। কারণ সবকিছু ছাপিয়ে লক্ষ্য যে নবীর রওজার পাশে বসে ইফতার করা আর সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করা। মাগরিবের নামাজ শেষে মুসল্লীরা যখন মসজিদ থেকে বের হয় তখন চারদিকে রাস্তায় রাস্তায় চা, গাওয়া, খেজুর নিয়ে রোজাদারদের জন্য অপেক্ষা করে হাজারো মানুষ। খাওয়ানোতেই যেন পরম তৃপ্তি
সবচাইতে বড় প্রাপ্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি।
হে মহান আল্লাহ তুমি আমাদের কে সোনার মদিনায় বারবার যাওয়ার তৌফিক দাও।
লেখক ও প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী