১৯ ৫৭ সালে বাংলার রাজদন্ড পরদেশি শকুনের হাতে চলে যাবার পর দীর্ঘ দু’শ বছর পার করে ফের আমরা যখন স্বাধীনতার স্বাদ পেতে যাব তখন আমাদের উপর চেপে বসে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভূত। ফল হিসেবে বাঙালি দুই ভাগে ভেঙে পড়ে এবং ধর্মের নামে আমাদের উপর চেপে বসে পাকিস্তান নামক আরেক শকুন। এরপর থেকে আবার শুরু হয় নিপীড়ন, শোষণ নিযার্তন। ফলে
স্বাধীনচেতা বাঙালি আবার সোচ্চার হলে বাংলার বুকে আসে বায়ান্ন-ছোটি-ঊনসত্তর। তারই ধারাবাহিকতায় সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তর। আমরা পাই নতুন ভূগোল এবং রাজদন্ড। কিন্তু সেই সুসময় বেশিদিন বাঙালির কপালে সইল না। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধীরা পুনর্বার বাংলার মসনদ দখল করে। ফলে স্বাধীনতার
পরও বারবার সামরিকতন্ত্রের বুটের আঘাতে ও স্বৈরতন্ত্রের আক্রমণে পরাস্ত হয়েছে গণতন্ত্র। শুধু একবার নয় বারবার। এরপর ৯০-এ আবার দিতে
হয়েছে গণতন্ত্রের দাম নূর হোসেন, জাহাঙ্গীর, দীপালিদের রক্ত। ৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর এমন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯১-এর নির্বাচনে জয়লাভ করেই বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে আবার ও নতুন করে বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধীদেরকে আমাদের অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার অংশীদার হবার সুযোগ করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের পবিত্র রক্তের সাথে বেঈমানী করলো বিএনপি। খুনিদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে শহিদের রক্তকে অপবিত্র করে দেয়। সমস্ত আন্দোলনের প্রাপ্তিকে বিফল করে দেয়। তাই নতুন প্রজম্নদের উদ্দেশ্য বলতে চাই শুধু এবার নয় ভাবষ্যতে এদেশে আর কোনো ভোট যেন তেমন ভুলের ক্ষেত্র তৈরি করতে না পারে সেজন্য আজকের নতুন তরুণ প্রজন্মকে সচেতন থাকতে হবে। এই ভোটের অধিকার আমাদের পবিত্র আমানত। এর যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে আমাদের সবাইকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট প্রদানের মাধ্যমে। তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে এবং বুঝাতে হবে তাদের হাতের একটি ভোট কতটা
গুরুত্বপূর্ণ, কতটা মূল্যবান। মনে রাখতে হবে, বাঙালিরা ভোট দিয়ে নিজ ভাগ্য গড়ার যে সুযোগ আজ লাভ করেছে সেটা এত সহজলভ্যও ছিলো না।
সেই সুযোগ পাবার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, সাধারণ মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার জন্য আমাদের অস্ত্র হাতে তুলে যুদ্ধ করতে হয়েছে বাংলা আবালবৃদ্ধবনিতা। বারবার রাজপথে ঢালতে হয়েছে ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত। শুধু ইতিহাস পাঠ করলেই এর মর্মার্থ
বোঝা যাবে না। এটা হৃদয় দিয়ে অন্তর থেকে অনুভবের করতে হবে। অন্তর দিয়ে এর চেতনাকে
ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে, বুঝতে হবে এই একটা হাতের ছাপ ভোট পুরো জাতিকে পাল্টে দিতে পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কিংবা ন্যায়ের বিরুদ্ধে। বুঝতে হবে প্রতিটি জনগণের আঙুলের এক একটি ছাপ শুধু সরকার নয়,দেশকে-সমাজকে-উন্নয়নকেই বদলে দেওয়ার হাতিয়ার। তাই এই হাতিয়ারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে সঠিক ইতিহাস
অনুধাবন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধের ইতিবৃত্ত জানা থাকতে হবে। জানা থাকতে হবে রাজনীতির ইতিহাস, দলীয় মূলনীতি, রাজনৈতিক দর্শন এবং সর্বোপরি জাতি ও জনগণের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। তরুণ প্রজন্মকে মনেপ্রাণে অনুধাবন করতে হবে তিরিশ লক্ষ শহিদ, ২ লক্ষের অধিক মা-বোনের ইজ্জত আর সিঁদুরের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশ কোনো ছেলের খেলনা নয়,মোড়লপনায় যাকে খুশি মসনদে বসিয়ে দেবো। তাই এদেশের তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হবে। তরুণ প্রজন্মরা যুগে যুগে পৃথিবীতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিশেষত দেশের শিক্ষিত তরুণদের সে দায়িত্ব
বেশি করে নিতে হবে। যেহেতু আমাদের প্রবীণ প্রজন্মের অধিকাংশই অল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত তাই শিক্ষিত তরুণদের দায়িত্ব হলো নতুন প্রজন্মকে
তাদের অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে রাজনীতির ইতিহাস জানানো, মূলনীতিগুলো বুঝানো, দেশের স্বার্থে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাতলানো। উন্নয়নগুলোর ধারাবাহিকতায় যায় তা বুঝানো। খেয়াল রাখতে হবে।যাতে কেউ ধর্মের তাবিজ ঝুলিয়ে তাদের আবেগ নিয়ে খেলতে না পারে। বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল দেশের স্বপ্ন দেখে আমাদের স্বজনরা অকাতরে দেশের জন্য প্রাণ
উৎসর্গ করেছিলেন সেই আদর্শই আমাদের পথ চলবার আলোর বাতিঘর হয়ে পথ দেখাবে আজীবন। এর থেকে কখনো বিচ্যুত হওয়া যাবে না এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে কখনই কোনো কারণেই। যে কোন পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের আদর্শের ভিতরেই থাকতে হবে এদেশে জন্ম নেওয়া প্রতিটি নতুন প্রজন্মকে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে সকল দলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পক্ষে থাকতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীরা তো নয়ই, তাদের
সহযোগী কেউই এদেশে যেন রাজনীতি করতে না পারে, সেই দিকে তরুণদের সচেষ্ট হতে হবে। যেই সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ, ধর্মের অপব্যবহারকারী অপরাজনীতির কারণে পরাজিত দেশবিরোধী শক্তিরা
স্বজাতির উপর আঘাত হেনেছিলো বারবার, সেই অপরাজনীতি যেন এদেশে আর ঠাঁই না পায়। মনে রাখতে হবে,এই দেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের
চক্রান্ত এখনো কিন্তু চলমান। এই চক্রান্তের গভীরতা, নিষ্ঠুরতা ও ব্যাপকতা অনুধাবন করতে হবে। দেশের ভাবিষ্যতের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তের ভয়াবহতাকে অত্যন্ত
গুরুত্বের সাথে নিয়ে সকলকে সম্মিলিতভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। দেশবিরোধীদের সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে এই সময়
আমাদের সবচেয়ে বড়ো পদক্ষেপ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায়ন করা। কোনো ক্ষুদ্র কারণেই আমাদের বিভাজিত হওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত
ক্ষোভ থাকতে পারে, দলের ব্যক্তিগত মতপার্থক্য থাকতে পারে, দলীয় কাজে অসম্মতি থাকতে পারে, থাকাটা স্বাভাবিক, বড়ো দলে এসব থাকবে কিন্তু
দদূ রাখতে হবে সামগ্রিক পরিস্থিতি কী। আগামী ৭ তারিখ আমাদের জাতীয় নির্বাচন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির টিকে থাকার লড়াই। এই
লড়াইয়ে থাকতে হবে সকল তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে। তরুণদের জন্য এটাই স্পষ্ট হিসাব স্বাধীনতার পক্ষে থাকা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা। স্বাধীনতার পক্ষে ভোট প্রদান করা ও অন্যদেরকে উৎসাহিত করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যুদ্ধাপরাধীদের দল বা তার সহযোগী বিএনপির বাক্সে নিজের পবিত্র আমানতটি তুলে দিয়ে তারুণ্য রক্তের সাথে বেইমানি করবে না,করতে পারবে না কোনদিন।
গ্রাহের যে গর্ব তাকে অপমান করবে না কোনোদিন
আজ আমাদের সামনে কঠিন পরীক্ষা। এ পরীক্ষা আমাদের উতরাতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা,উন্নয়ন রক্ষা করার জন্য আমাদের সকলের স্লোগান উচ্চারিত হোক যা এখন খুব জোর নিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে
ও ভার্চুয়াল মিডিয়াতে সকলের অন্তরে- ‘তরুণ প্রজন্মের প্রথম জোট স্বাধীনতার পক্ষে হোক। স্লোগান ওঠেছে,আমার ভোট আমি দিবো,মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দিবো,উন্নয়নের পক্ষে দিব। আমার মনে হয় এই স্লোগান তিনটিতে স্পষ্ট বলে দেওয়া আছে, বাংলার সকল নারীপুরুষের ও তরুণদের প্রতি জাতির
কথা। শহিদদের মনের না-বলা কথা। শহিদের অন্তরের অনুভূতির কথা,এদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কথা, তরুণদের চাওয়ার কথা- একটি সমৃদ্ধ, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গিমুক্ত সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।
বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়ন চায়, প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করতে চায়। গরিব-দুঃখি, মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে, দেশ সমৃদ্ধ হবার জন্য উন্নয়নের যে মহাকর্মযজ্ঞ চলছে, তার গতি যদি ধরে রাখতে চাই তবে বঙ্গবন্ধুর সুকন্যা বিশ্বের লৌহমানবী শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। আওয়ামী সরকারের বিকল্প নাই। উন্নয়নের সুযোগ ও সময় এই
সরকারকে আবার দিতে হবে। আমারা বাঙালি ভাগ্যবান জাতি, আমারা বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে এদেশের শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। তাই কম সময়ে এদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্থান করাতে পেরেছি। এই পাওয়াকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য এই সরকারের ধারাবাহিকতা খুব দরকার। একটি সরকারের সব কাজ সঠিক হবে তা সম্ভব না, সরকারের সব কাজ ভালো লাগারও কথা না, সবার সব দাবি মানাও সম্ভব না। সব সীমাবদ্ধতার মাঝে সরকার পরিচালিত হয়। বর্তমান সরকারের অসংখ্য অগণিত ভালো কাজ আছে, সে কাজগুলোর কথা সাধারণ জনগণকে বোঝাতে হবে। বোঝাতে হবে জোট সরকারের সময়ে হাওয়া ভবনে কী দুর্নীতি হয়েছিলো দেশের কী হাল হয়েছিল। বিচার করতে হবে তাদের
সরকারের সময়কালে দেশের উন্নয়নে যথেষ্ট হয়েছিলো কি না। তার চেয়েও তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড়ো বিবেচ্য বিষয় হতে হবে ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কারা তাদেরকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে,স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছে, কারা দিচ্ছে সামনে পথ চলার সুন্দর দিকনির্দেশনা। চলবে