মো.কামাল উদ্দিনঃ
সে বসে ছিল গাড়ির জানালার পাশে, মেঠো আলো এসে পড়ছিল তার কপালে, চিকচিক করে উঠছিল তার নাকের ছোট্ট নথ, যেন এক জোনাকি আলো সন্ধ্যার পরতে। সাদা-গোলাপি সাজে মাখানো তার উপস্থিতি, গায়ে ছিল একখানা লালচে-বেগুনি শাড়ি—যা চোখে না পড়ে পারা যায় না। তার ঠোঁটের কোণে ফুটে থাকা এক নরম হাসি, চোখের চাউনি এতটাই স্নিগ্ধ, যেন সেখানে লুকানো এক নদীর জলের মতো নরম ভালোবাসা।
আমি জানি না ঠিক কোন মুহূর্তে তার প্রতি আমার মনের দরজা খুলে গিয়েছিল। হয়তো তার ওই এক চাহনি, যেটি সহজ অথচ গভীর; হয়তো তার কানে ঝোলানো ছোট্ট একটি দুল; কিংবা তার হাসিমাখা মুখের নির্লিপ্ত স্বাভাবিকতা, যা জোছনার মতো মনের আকাশে আলো ফেলে।
সে আমার কাছে শুধু একজন নারী নয়—সে আমার ভালোবাসার ভাষা। সে হলো সেই অনুভব, যা শব্দ ছাড়াও বোঝা যায়। সে যেন এক অনুচ্চারিত কবিতা, যে নিজের সৌন্দর্যে নয়, নিজের সহজতায় মোহিত করে রাখে চারপাশ। তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, এ চোখ দুটো অনেক কথা বলার ক্ষমতা রাখে—কিন্তু সব বলে না। কিছু রেখেই দেয়, কিছু জমিয়ে রাখে ভালোবাসার চিঠির পাতায়।
তাকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা বহুদিনের। কিন্তু শব্দ যেন তার মতো নিখুঁত হয়ে উঠতে চায় না। আজ যখন সে আমার সামনে, জানালার পাশ থেকে একচিলতে সূর্যকণা তার গালে এসে পড়েছে—আমি ঠিক তখনই কলম হাতে তুলে নিলাম।
তার চুলগুলো অবিন্যস্ত, যেন কোনো নিয়ম মানে না। তবুও তাতে একটা মাধুর্য আছে, ঠিক তার ব্যক্তিত্বের মতো। তার ঠোঁটের হালকা গাঢ় লিপস্টিক তাকে যেন আরও মিষ্টি করে তুলেছে। গলায় ঝুলছে সোনার চেইন, তাতে একটা খুব ছোট্ট তাবিজ—হয়তো তার প্রিয় কারও দেয়া। প্রতিটি খুঁটিনাটি দেখে আমার মনে হয়, এ মেয়ে ভালোবাসার যোগ্য। সে কারো জীবনে এলে সে শুধু প্রেম এনে দেয় না, সে আনে স্থিরতা, আনে নির্ভরতা।
আমার ভালোবাসা কখনও উচ্চকণ্ঠে বলে উঠতে পারিনি। আমি কেবল তার ছবি তুলে রাখি মনের ফ্রেমে। আমি ভালোবাসি তাকে, নিঃশব্দে, নিরালায়। হয়তো সে জানেই না, আমি কতোবার তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি, কতবার তার ছবির দিকে তাকিয়ে দিনের ক্লান্তি ভুলেছি।
সে আমার জন্য এক রকমের প্রেরণা। তার ওই কোমল হাসি আমাকে মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীতে এখনো ভালো কিছু আছে। সে যেন এক বসন্তের আগমনী বার্তা, যে আসে ধীরে ধীরে কিন্তু তার প্রভাব রেখে যায় হৃদয়ের গভীরে।
যখন সে তাকায়, মনে হয় পৃথিবী কিছুক্ষণের জন্য থেমে যায়। তার চোখে আলো থাকে, কিন্তু তাতে কোনো জৌলুস নেই—সে আলো স্বাভাবিক, গোধূলির মতো। সে চোখে আমি যেন প্রতিদিন নিজেকে খুঁজে পাই। তার চোখ আমাকে প্রতিবারই বলে দেয়, "ভালোবাসা এখনো বেঁচে আছে।"
আমি চাই না সে বদলে যাক, আমি চাই না সে বুঝে ফেলুক আমার প্রতিটি ভালোবাসার সুর। আমি চাই, সে থাকুক ঠিক এইরকম—একটি মিষ্টি রহস্য হয়ে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রতিবার যেন নতুন করে প্রেমে পড়ি, প্রতিবার যেন কবিতা লিখে ফেলি।
সে হয়তো জানে না—আমার প্রতিদিনের দিনপঞ্জিতে তার নাম লেখা থাকে। আমি তার নাম মুখে নিই না, কারণ আমি জানি, কিছু ভালোবাসা উচ্চারণ করলে তার জাদু নষ্ট হয়ে যায়। আমি শুধু তাকিয়ে থাকি, নীরবে, নিঃশব্দে। আমার ভালোবাসা তার চাহনির ভেতরেই বাসা বেঁধেছে।
আজ এই লেখাটি, এই কথাগুলো, শুধু তার জন্য। সে জানুক, এই পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ আছে, যে তার হাসির প্রতিটি রেখায়, তার চোখের প্রতিটি চাহনিতে, ভালোবাসার গল্প খুঁজে পায়। সে জানুক, ভালোবাসা শব্দে নয়, চাহনিতে প্রকাশ পায়—আর সেই চাহনিই তার মাঝে আছে, এক অনন্ত মায়ার মতো।
আমার মিষ্টি মেয়েটি, তুমি যেমন আছো, ঠিক তেমনি থেকো। তুমি শুধু একজন নারী নও—তুমি আমার প্রেমের প্রতীক, আমার ভাবনার ফুলঝুরি, আমার নির্জন কবিতার সুর।
জানালার পাশে বসে থাকা সেই মেয়েটির একচিলতে হাসি দিয়ে আমি শুরু করেছিলাম লেখা। এখন কলম থামাতে পারছি না—কারণ, ভালোবাসা থামার নয়। ভালোবাসা তো বহে চলে নদীর মতো, সে শুধু গন্তব্য চেনে না—সে শুধু ভালোবাসতে জানে।
লেখক- তোমার প্রেমে মগ্ন এক নীরব ভালোবাসার মানুষ।
লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ সম্পাদিত ও হাজী জসিম উদ্দিন প্রকাশিত